অপমান করেছেন বিচারপতি। কাজের সততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। রাগে, দুঃখে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পুলিশ আধিকারিক। আদালত থেকে বেরিয়ে পৌঁছে গেলেন রেললাইনের ধারে। কোনও কিছু না ভেবে সটান শুয়ে পড়লেন লাইনের উপর। তারপর? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কর্মক্ষেত্রে হেনস্থা নতুন কিছু নয়। সামান্য ভুল হলেই জুটবে অপমান। অনেক সময় বিনা দোষেও কর্তৃপক্ষের ভর্ৎসনা সহ্য করতে হয়। বেসরকারি সংস্থায় এমনটা আখচার হয়ে থাকে। তবে সরকারি অফিসের ছবিটাও এমন কিছু আলাদা নয়। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনায় নিজেকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পুলিশকর্মী।
ঘটনা যোগীরাজ্যের। আইনশৃঙ্খলার দিক দিয়ে সে রাজ্যের প্রশাসন বেশ কড়া। এমনটাই শিরোনামে হামেশাই দেখা যায়। সেখানেই কাজের গাফিলতি নিয়ে আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়লেন এক পুলিশ কর্মী। আলিগড়ের বান্না থানার সাব ইন্সপেক্টর সচিন কুমার বরাবরই নিজের কাজ নিয়ে খুঁতখুঁতে। কোথাও এতটুকু ভুল করতে পছন্দ করেন না। অথচ সেই তাঁকেই কাজের গাফিলতি নিয়ে রীতিমতো অপমান করেন বিচারপতি। ঘটনার কেন্দ্রে একটি বাইক চুরির গ্যাং। জনা পাঁচেক দুস্কৃতি মিলে বিগত কয়েকদিন ধরে পুলিশকে রীতিমতো ঘোল খাইয়েছিল। একটু সুযোগ পেলেই বাইক নিয়ে চম্পট দিত দুষ্কৃতির দল। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে এরা চুরি করত। কাজটা এতটাই নিখুঁত হত, যে হাতেনাতে ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে পুলিশের জালে শেষমেশ ধরা পড়তে বাধ্য হয় চোরের দল। ধৃতদের নিয়ে আদালতে যাওয়ার দায়িত্ব পান সাব ইন্সপেক্টর সচিন। সময় মতো দুষ্কৃতীদের নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট অফিসে হাজির হন তিনি। কিন্তু সেখানে প্রায় ৫ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। তবে এতক্ষণ অপেক্ষার পরে ম্যাজিস্ট্রেটের দেখা পেলে, তাঁর আচরণ দেখে বেজায় ঘাবড়ে যান সচিন। অভিযোগ, তাঁকে দেখামাত্র ভর্ৎসনা করতে শুরু করেন বিচারপতি। এই চোরের দলকে গ্রেফতারির নেপথ্যে অন্য কোনও মতলব রয়েছে সচিনের, এমনই দাবি করেন ম্যাজিস্ট্রেট। অপমানের সুরে একাধিক মন্তব্য করেন। বারবার সচিনের কাজের সততা নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। ধৃতরা আসলে নির্দোষ এই দাবিতেই সচিনকে অপমান করেন বিচারপতি। যা একেবারেই মানতে পারেননি সচিন।
ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস থেকে বেরিয়ে সটান হাজির হন রেললাইনের ধারে। শুয়ে পড়েন লাইনের মাঝে। তিনি যে আত্মহত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়েই এমনটা করছেন, তা বোঝার বাকি ছিল না। স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে ঘাবড়ে যান রীতিমতো। কিন্তু কারও বারণ শুনতে চাননি সচিন। বাধ্য হয়ে থানায় খবর পাঠানো হয়। তক্ষনি সেখানে হাজির হন অন্যান্য পুলিশকর্মীরা। ছিলেন উচ্চ পদস্থ আধিকারিকও। প্রথমে সতীর্থদের অনুরোধেও লাইন থেকে উঠতে চাননি সচিন। এই অপমান তাঁর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব না, বার বার এ কথা বলতে থাকেন। যদিও শেষমেশ তাঁকে লাইন থেকে তোলা হয়। ফিরিয়ে আনা হয় থানায়। ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই নেটদুনিয়ায় ভাইরাল। সেখানেই দেখা গিয়েছে আক্ষেপের সুরে নিজের অপমানের কথা বলছেন সচিন। যা নিয়ে নানা প্রশ্নও উঠেছে নেটদুনিয়ায়। একইসঙ্গে এই ঘটনা ওই ম্যাজিস্ট্রেটের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তাঁকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।