নির্বাচনী প্রচারে বারবার বজরংবলীর নামে স্লোগান তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস বজরং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কথা বলতেই পালটা বজরংবলীকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাতেও সাফল্য মিলল না কর্ণাটকের ভোটে। আর ভোটের ফলে বিজেপি পিছু হটতেই সেই বজরংবলীকে টেনেই আক্রমণ শানালেন বিরোধীরা। কী বলেছেন তাঁরা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একেই বোধহয় বলে ব্যুমেরাং। ভোটে জেতার জন্য যে হাতিয়ারের উপর ভরসা করেছিল বিজেপি শিবির, সেই হাতিয়ার যে ফিরে লাগবে তাদের গায়েই- এমনটা বোধহয় আশা করেননি কেউই। কিন্তু কর্ণাটকে ভোটগণনা শুরুর পরেই নিজেদের অস্ত্রেই ঘায়েল হতে হল বিজেপিকে। নির্বাচনের ফলাফলে পিছিয়ে পড়তেই গেরুয়া শিবিরকে একের পর এক তোপ দাগলেন বিরোধীরা। আর সেই আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠলেন বজরংবলী-ই।
আরও শুনুন: দুধ থেকে সাপ সবই এল প্রচারে, কর্ণাটকের ভোটে তবু দেখাই মিলল না হিজাব বিতর্কের
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এবং কংগ্রেস দুই দলের কাছেই ‘অ্যাসিড-টেস্ট’ ছিল কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন। তাই ভোটের আগে বারবার সে রাজ্যে প্রচারে নেমেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একসময় প্রতি জনসভাতেই ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে। আসলে তাঁর নিশানায় ছিল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহার। যেখানে কংগ্রেসের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কর্ণাটকে ক্ষমতায় এলে কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া-র মতোই কট্টর হিন্দুত্ববাদী বজরং দলকেও নিষিদ্ধ করা হবে। এর পরেই নিয়ম করে প্রতিটি নির্বাচনী জনসভায় ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান দিতে শুরু করেছিলেন মোদি। তাঁর প্রচারের মিছিলেও বজরংবলীর সাজে ভক্তদের দেখা মিলেছে। কংগ্রেস রাম ও হনুমানকে অপমান করেছে বলেও সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিজেপির আস্ফালন সত্ত্বেও কর্ণাটকে শেষ হাসি হাসল কংগ্রেস। আর কংগ্রেসের জয়যাত্রার আঁচ পাওয়া মাত্র সেই বজরংবলীকে টেনেই বিজেপিকে পালটা দিলেন কংগ্রেসের সদস্যরা। এদিন দিল্লিতে এআইসিসি সদর দপ্তরে বজরংবলী সেজে হাজির হন দলের একাধিক কর্মী। অনেকের হাতে দেখা যায় বজরংবলীর গদা। তাঁদের দাবি, দেবতার আশীর্বাদ আসলে রয়েছে তাঁদের সঙ্গেই। কংগ্রেস বিধায়ক তথা ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলের খোঁচা, বজরংবলীর গদা বিজেপির দুর্নীতির মাথায় পড়েছে। আর তার জেরেই কর্ণাটকের ভোটে ভরাডুবি ঘটেছে তাদের। এদিকে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের প্রচারে কর্ণাটকে এসেই মোদি পদবি নিয়ে মন্তব্য করার দরুন রাহুল গান্ধীকে বেকায়দায় ফেলেছে বিজেপি শিবির। সেই পরিস্থিতিতে এই জয়কে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দেখছে কংগ্রেস।
আরও শুনুন: নিখোঁজ গুজরাটের ৪০ হাজার নারী! ‘কেরালা স্টোরি’ বিতর্কের মাঝেই মোদি-শাহকে খোঁচা উদ্ধব-গোষ্ঠীর
শুধু কংগ্রেসের নেতাকর্মীরাই নন। কর্ণাটকে বিজেপির ধাক্কা নিঃসন্দেহে গোটা বিরোধী শিবিরের কাছেই বাড়তি অক্সিজেন। আর তাই গেরুয়া শিবিরের প্রতি কটাক্ষ ধেয়ে এসেছে অন্যান্য বিরোধীদের কাছ থেকেও। ভোটের গণনায় কংগ্রেস এগিয়ে যেতেই বিজেপিকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের পুত্র তেজস্বী যাদব। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘বোঝা যাচ্ছে দেবতা বজরংবলী এখন বিজেপির উপরে খুব চটে গিয়েছেন।’’ আসলে কর্ণাটকে হেরে যাওয়ার দরুন বর্তমানে গোটা দক্ষিণ ভারতের কোনও রাজ্যেই আর বিজেপি সরকার রইল না। চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে পায়ের তলায় আরও একটু জমি পেল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। তাই কর্ণাটকে বজরংবলীকে সামনে রেখে বিজেপি যে হিন্দুত্ববাদের তাস খেলতে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত বিজেপির সেই চাল কাজে লাগল না বলেই মনে করছে বিরোধী শিবির।