মহাভারতে কর্ণ জানতেন না, আদতে তাঁর মা রাধা নন, কুন্তী। নন্দ গোপের ঘরে পালিত কৃষ্ণও প্রথমে জানতেন না, জন্মের পরই মায়ের কোলছাড়া করা হয়েছে তাঁকে। অদলবদল করা হয়েছে দুই মায়ের শিশুকে। তেমনই ঘটনা যেন ঘটেছে এই দুই মহিলার সঙ্গে। জন্মের ৫৭ বছর পরে টলমল হয়ে গিয়েছে তাঁদের এতদিনের পরিচয়টাই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সম্পূর্ণ অচেনা দুজন মানুষ। অথচ গল্পের শেষে গিয়ে দেখা গেল, সম্পর্কে তারা দুই ভাই। জন্মদাতা মা-বাবার থেকে অজান্তেই আলাদা হয়ে গিয়েছিল একজন। সিনেমায় তো এমনটা হরবখত দেখা যায়। তা বলে বাস্তবে? হ্যাঁ, বাস্তব যে কখনও কখনও কল্পনাকেও হার মানিয়ে দিতে পারে, যেন তারই প্রমাণ পেলেন দুই মহিলা। কীভাবে? জন্মের ৫৭ বছর পরে তাঁরা জানতে পারলেন, এতদিন যে পরিবারকে তাঁরা নিজের বলে জেনে এসেছেন, তা আসলে তাঁদের পরিবারই নয়। আর এই জানার ফলে ওলটপালট হয়ে গেল তাঁদের সমগ্র অস্তিত্বটাই।
আরও শুনুন: প্লাস্টিকের বিকল্প, কমলালেবুর খোসা দিয়ে গিফট ব়্যাপার বানিয়ে তাক লাগালেন ছাত্রী
না, অনাথ নন তাঁরা। মা বাবার পরিচয় জানেন না, এমনটাও নয়। এমনকি পালিত সন্তানও নন তাঁরা। তবে? সেই ‘তবে’-র উত্তরটাই যে ঘেঁটে দিয়েছে তাঁদের এতদিনের চেনা জীবন। তাঁরা জানতে পেরেছেন, হাসপাতালে জন্মের পরই আসলে অদলবদল ঘটে গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে। ফলে যে মা-বাবার কাছে তাঁরা বড় হয়েছেন, যে পরিবারকে নিজের বলে জেনেছেন, পারিবারিক সূত্রে যে জীবন তাঁরা পেয়েছেন, এর কোনোটাই আসলে তাঁদের প্রাপ্য ছিল না। জন্মসূত্রে যা একজনের পাওয়ার কথা ছিল, তা পেয়ে গিয়েছেন অন্যজন।
আরও শুনুন: দিনরাত টগবগ করে জল ফুটছে, জানেন কোথায় আছে এমন অদ্ভুত হ্রদ?
তাহলে এতদিন পর কীভাবে সামনে এল এই সত্যিটা? আসলে নিজের পরিবারের সম্পর্কে বিশদে জানার জন্য নিজের ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলেন টিনা এনিস। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি ওয়েবসাইট তাঁর আত্মীয়দের লম্বা তালিকা দেয়। কিন্তু তাদের কাউকেই চিনতেন না টিনা। খোঁজখবর করে যা জানা গেল, তাতে তাঁর চোখ চড়কগাছ। দেখা গেল, ওই তালিকায় থাকা দুই ব্যক্তি আসলে তাঁর দুই যমজ ভাই। এদিকে টিনা যাঁকে এতদিন মা বলে জেনে এসেছেন, সেই ক্যাথরিন ওই টেস্ট করানোর পর দেখা গেল, মা-মেয়ের রিপোর্ট আদৌ মিলছে না। আর তখনই টিনার মনে হয়, তবে কি গোড়ায় গলদ? নিজের জন্মদিন, ১৯৬৪ সালের ১৮ মে তারিখ ধরে তিনি খুঁজতে থাকেন সেদিন ওই হাসপাতালে জন্মানো অন্যান্য শিশুকন্যাদের। আর সেইভাবেই, অবশেষে তাঁর দেখা হয়ে যায় জিল লোপেজ-এর সঙ্গে। যার সঙ্গে ক্যাথরিনের ডিএনএ রিপোর্টও মিলে যায়। বোঝা যায়, ক্যাথরিনের আসল মেয়ে জিল-ই, টিনা নন। জিল যদিও তাঁর আসল মাকে পেয়েছেন, টিনার সঙ্গে কিন্তু আর দেখা হল না তাঁর আসল মা-বাবার। তাঁরা দুজনেই যে মারা গিয়েছেন এতদিনে।
এতদিন পর এত বড় সত্যিটা জেনে দিশেহারা ওই দুই মহিলা। হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে শেষমেশ। কিন্তু যে সময়টা, যে মানুষগুলো হারিয়ে গেল তাঁদের জীবন থেকে? সেই ক্ষতির পূরণ হবে কী করে? জানেন না টিনা আর জিল।