কথা ছিল, জমানত জব্দ হবে কালো টাকার। অবৈধ যত লেনদেন সব পড়বে মুখ থুবড়ে। বড় স্বপ্ন নিঃসন্দেহে। দেশবাসীকে তা দেখিয়েই বিমুদ্রাকরণের ঘোষণা বা নোট বাতিল করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তারপর কেটে গেছে পাঁচটা বছর। কী অবস্থা এখন কালো টাকার? সব কালো টাকা, ভালো টাকা হল কি? আসুন একটু পরিস্থিতির দিকে চোখ রাখা যাক।
মা ছিলেন একরকম। মা যা হইবেন, দেখানো হয়েছিল তার-ই স্বপ্ন। বিনিময়ে মা যা হইলেন, তাতে উদ্বেগ বাড়ছে বই কমার কথা নয়। হ্যাঁ, কথা হচ্ছে নোট বাতিল নিয়েই। বছর পাঁচেক আগে এই ৮ নভেম্বরই দেশবাসীকে স্তম্ভিত করে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, সব পুরনো নোট বাতিল করা হল। আকস্মিক সেই ঘোষণা গোটা দেশকেই একেবারে বিমূঢ় করে তুলেছিল। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে সকলেই দৌড়চ্ছিলেন, কী করে নিজের সঞ্চিত অর্থটুকু পুনরুদ্ধার করা যায়, তার জন্য। শুরু হল নানাবিধ নতুন প্রক্রিয়া। নতুন নিয়মাকানুন এল হু হু করে, নির্দেশিকা বদলাতে শুরু করল প্রায় রাতারাতি। নাভিশ্বাস ফেলার সময় নেই ব্যাংক কর্মীদের। এটিএম কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন। চূড়ান্ত হয়রানির শিকার মানুষ, এমনকী নেমে এল মৃত্যুও। এখনও সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারেননি কেউই। সেদিন সেই সব কষ্ট দেশের মানুষ সহ্য করেছিলেন, কয়েকটা কারণে। নোট বাতিলের অন্যতম উদ্দেশ্য হিসেবে দেখানো হয়েছিল, কালো টাকার অবলোপ। অর্থাৎ, দেশের সরকারকে ফাঁকি দিয়ে, কর ফাঁকি দিয়ে যে বিরাট অবৈধ লেনদেন চলে, এর ফলে তা এক ধাক্কায় তলানিতে গিয়ে পৌঁছবে এমনটাই ছিল ধারণা। সমস্ত কালো টাকা মূল্যহীন কাগজমাত্র হয়ে উঠবে- এমনটাই ছিল প্রত্যাশা।
আরও শুনুন: স্মল পক্সের জীবাণুই হয়ে উঠতে পারে জঙ্গিদের হাতিয়ার! কেন জাগল এমন সন্দেহ?
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচটা বছর। তা কী দাঁড়াল কালো টাকার অবস্থা? অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এ ব্যাপারে মোটেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। কেননা, বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য থেকে তাঁরা স্পষ্টই বুঝতে পারছেন, কালো টাকার লেনদেন এখনও চলছে বহাল তবিয়তেই। নোট বাতিলের একেবারে পরে পরেই রিজার্ভ ব্যাংকের দেওয়া তথ্য জানান দিয়েছিল, অধিকাংশ পুরনো টাকাই ফেরত এসেছে। ফলে কালো টাকার পরিমাণ যে কমেছে, এমনটা জোর দিয়ে বলতে পারেন না কেউই। বরং অনেকেই বলছেন, বিমুদ্রাকরণ পরবর্তী পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে, বিভিন্ন চোরাগোপ্তা পথে কালো টাকা সাদা হয়েছে দেদার।
আরও শুনুন: বিগড়ে গেল নাগরদোলা, ১০০ ফুট উঁচুতে ঝুলে থাকল দুই খুদে, তারপর…
সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সাম্প্রতিক সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত সাত বছরে যাঁরা সম্পত্তি কিনেছেন, তাঁদের অন্তত ৭০ শতাংশ, প্রদেয় অর্থের একটা অংশ নগদেই মিটিয়েছেন। এদের মধ্যে আবার ১৬ শতাংশ প্রায় অর্ধেকটাই মিটিয়েছেন নগদে। গত পাঁচ বছরে ডিজিটাল লেনদেন বাড়লেও, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশ মানুষ স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মুদি বাজার, বাইরে খাবার খাওয়া বা অর্ডার দিয়ে খাবার ডেলিভারি নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা নগদই ব্যবহার করেন। ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস কেনার ক্ষেত্রেও নগদের পক্ষপাতী অন্তত ১৩ শতাংশ মানুষ। আর গৃহসহায়কের বেতন থেকে টুকিটাকি হাজারও বিষয়ে এখনও যে নগদই ভরসা, মোটামুটি চার ভাগের তিন ভাগ মানুষই তাতে সায় দিয়েছেন। অর্থাৎ মোটের উপর নগদের ব্যবহার আছে বহাল তবিয়তেই। বিশেষত সম্পত্তি কেনা-বেচার ক্ষেত্রে নগদের যে ব্যবহার, সেখানে মিডল ম্যান, ব্রোকার ইত্যাদি শ্রেণি যে জড়িয়ে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
মোটের উপর, নগদে অবৈধ লেনদেন তেমন করে যে আটকানো গেছে, তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই। আর এখানেই জেগে ওঠে সেই পুরনো প্রশ্ন। তাহলে কি নোট বাতিল স্রেফ মানুষের হয়রানি হয়েই থেকে গেল! কাজের কাজ হল না কিছুই!
প্রশ্নগুলো সহজ নয় যদিও, তবে উত্তর এখন মোটামুটি সবারই জানা।