মশলা না দিলে রান্নায় স্বাদ বাড়বে কী করে! অথচ সেই মশলাতেই নাকি মিশছে কাঠের গুঁড়ো, এমনকি অ্যাসিডও। দিল্লির ঘটনা সামনে আসতে উদ্বিগ্ন গোটা দেশ। কী ঘটেছে ঠিক? শুনেই নিন।
ভাজাভুজি থেকে ঝাল-ঝোল, হলুদ না হলে হয়! পরিমাণমতো হলুদ না মিশলে স্বাদ যাই হোক, রং হবে একেবারে ফ্যাকাশে। আবার ধনে গুঁড়ো কিংবা গরম মশলা গুঁড়োর কথাই ধরুন। রান্নার স্বাদ বাড়াতে এ তো আমরা হামেশাই ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু যা ভেবে ব্যবহার করছেন, আপনার হাতের মশলার প্যাকেটে ঠিক সেই জিনিসই আছে কি না, তা কি জানেন? উঁহু, তেমনটা কিন্তু নাও হতে পারে। দেখতে মশলার মতো হলেও, মশলার জায়গায় কাঠের গুঁড়ো বা সাইট্রিক অ্যাসিড বা নষ্ট হয়ে যাওয়া নারকেলের গুঁড়োই হয়তো আপনি অজান্তে মিশিয়ে ফেলছেন সাধের রান্নায়। আজ্ঞে হ্যাঁ, আজগুবি নয়, এমনটা কিন্তু সত্যি হতেই পারে। আর সেই আশঙ্কাতেই সিলমোহর দিল দিল্লির সাম্প্রতিক ঘটনা। খোদ রাজধানী শহর থেকেই বাজেয়াপ্ত হল ১৫ টন মশলা, যা আদতে নকল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ ঘটনা রীতিমতো ভয় ধরিয়েছে গোটা দেশেই।
আরও শুনুন:
দুধে-ভাতে নয়, সন্তান যেন থাকে সেরেল্যাক-বোর্নভিটায়! প্রার্থনা বদলাল, লাভ হল কি?
এমনিতে নকল বা ভেজাল নিয়ে এখন আর নতুন করে চমকে যাই না আমরা কেউই। বরং যে কোনও জিনিসেই কিছু ভেজাল থাকবেই, এমনটাই আমরা মেনে নিয়েছি। তারপরেও, খাবারের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সতর্ক তো হতেই হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে সেই খাবারের দুনিয়াতেই বারে বারে টান পড়ছে। সম্প্রতিই বিদেশের বাজারে নিষিদ্ধ হয়েছিল দেশের নামী সংস্থার গুঁড়ো মশলা। মশলায় ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, এ কথা শুনে কপালে ভাঁজ পড়েছিল দেশবাসীরও। কেননা স্বাদে সেরা হওয়ার দাবিতে যে মশলা নিজেকে বিজ্ঞাপিত করছে, সে বিজ্ঞাপনের লোভনীয় হাতছানিতে যে ভুলেছিলেন তাঁরাও। অথচ প্রথমে সিঙ্গাপুর, তারপর হংকং, দুই দেশেরই খাদ্যসুরক্ষা দপ্তর পরীক্ষানিরীক্ষা করে জানায় যে, সে মশলায় ইথিলিন অক্সাইডের পরিমাণ অনেক বেশি, যা আদতে একটি কীটনাশক। বলাই বাহুল্য যে, তা মানুষের ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত নয় তো বটেই, উপরন্তু বিপজ্জনকও। সে ঘটনার জের থাকতে থাকতেই ফের কাঠগড়ায় মশলার বাজার। এবার আর বিদেশেও নয়, দেশেই বাজেয়াপ্ত করা হল ১৫ টন মশলা। মশলার মতো দেখতে হলেও, আদতে সে সবই নকল। কাঠের গুঁড়ো থেকে অ্যাসিড, কী মেশানো হয়নি সেখানে!
আরও শুনুন:
আমজনতা নিয়ে নেতাদের মাথাব্যথা, আমআদমির মাথায় শুধুই আম
জানা গিয়েছে, দিল্লির কারাওয়াল নগর এলাকার দুটি কারখানায় রমরমিয়ে তৈরি হচ্ছিল এমন ভেজাল মশলা। যা দেখতে রোজকারের ব্যবহৃত মশলার মতোই। কিন্তু তাতে আসলে থাকছে নষ্ট হয়ে যাওয়া চাল, বাজরা, নারকেল, কুলের বীজ; শুকনো লঙ্কার বোঁটা, ইউক্যালিপটাসের পাতা, কাঠের গুঁড়ো, রাসায়নিক রং, সাইট্রিক অ্যাসিড, এমনই অনেক কিছু। দুটি কারখানা থেকে এহেন কাঁচামাল আটক করা হয়েছে মোটামুটি ৭২১৫ কেজির মতো। আর ৭১০৫ কেজি ভুয়ো মশলার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের জালে ধরা পড়েছে তিন অভিযুক্ত। পুলিশের বক্তব্য, বাজারচলতি আসল মশলার দামেই এই নকল মশলা বিক্রি করত অভিযুক্তরা। এর সঙ্গে আরও দোকানি ও ব্যবসায়ী এবং দালালরা জড়িয়ে থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।
দিনকয়েক আগেই হেলথ ড্রিংক আর ফুড সাপ্লিমেন্টের বেলায় একইভাবে জানা গিয়েছিল, তা শরীরের জন্য বিপজ্জনক। এবার সেই একই অভিযোগের নিশানায় রোজকার ব্যবহারের মশলাও। পুঁজির দুনিয়ায় কোনও পণ্যের কোয়ালিটি কন্ট্রোল কতখানি হল, সে প্রশ্ন কেউই করে না প্রায়। আর সেই ফাঁক দিয়েই আসর জাঁকিয়ে বসে এইসব ভুয়ো খাদ্যপণ্য। না জেনেই তা লাগাতার ব্যবহার করে চলেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যে আসলে অসহায়ের মতো না জেনেশুনে বিষপানে বাধ্য হচ্ছেন, সে কথাই বুঝিয়ে দিল এই সাম্প্রতিক ঘটনা।