কংগ্রেস নেত্রীর ‘যৌনকর্মী’ ইঙ্গিত নিয়ে তোপ দাগায় কমতি নেই। কিন্তু ঊর্মিলা মাতন্ডকরকে নিয়ে নিজের পুরনো মন্তব্যে সাফাই দিচ্ছেন সেই কঙ্গনাই। পর্নস্টারদের সম্মান দেওয়াই উচিত, কিন্তু চাইলেই কি কাউকে পর্নস্টার বলা যায়? এ প্রশ্ন উসকে দিল কঙ্গনার অনড় অবস্থানই। শুনে নেওয়া যাক।
মান্ডির বিজেপি প্রার্থী কঙ্গনা রানাউতকে নিশানা করা হয়েছে যৌনকর্মী কটাক্ষে, এই অভিযোগে সরব গোটা পদ্মশিবির। পালটা আক্রমণ শানাতে অবশ্য কঙ্গনা নিজেও কম যান না। মহিলা হয়ে মহিলাদের অসম্মান করা উচিত নয়, এই মর্মে ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়াকে একহাত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু তিনি নিজেও যে আগে এহেন মন্তব্য ছুড়েছিলেন? সেখানে কিন্তু এখনও অনড় কঙ্গনা। এই জাতীয় পেশার সম্মানের প্রসঙ্গ তুলেই নিজের বক্তব্যের সাফাই সাজাচ্ছেন তিনি।
আরও শুনুন:
মেয়েদের দাম কত! শাসক থেকে বিরোধী, সব পথ শেষে মিলে যায় একই প্রশ্নে?
আসলে, রাজনীতির মঞ্চ সবসময়েই কু-কথায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে কোনও নারীর প্রতি আক্রমণ শানাতে হলেই দেখা যায়, কেবল রাজনৈতিক বিরোধিতা করে যেন মন ওঠে না। নারীর চরিত্র নিয়ে কুৎসা করা রাজনীতির চেনা অভ্যাস। লোকসভার হাওয়ায় সেই অভ্যাসে জোয়ার এসেছে নতুন করে। যেমন কঙ্গনা রানাউত বিজেপি প্রার্থী হতেই তাঁর উদ্দেশে বিতর্কিত মন্তব্য ছুড়ে বসেছেন কংগ্রেস নেত্রী সুপ্রিয়া শ্রীনাত। সে মন্তব্যে তারকাকে ‘যৌনকর্মী’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলেই দাবি বিজেপির। এদিকে দেখা যাচ্ছে, একই দোষে দোষী করা চলে খোদ কঙ্গনাকেই। সাম্প্রতিক মন্তব্যের জেরে বেকায়দায় পড়তেই কঙ্গনার সেই পুরনো কথা টেনে এনেছেন কংগ্রেস নেত্রী। দেখা যাচ্ছে, আরেক বলি অভিনেত্রী ঊর্মিলা মাতন্ডকর যখন সাময়িকভাবে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন, সেসময়ে তাঁকে ‘সফট পর্নস্টার’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কঙ্গনাই। তা নিয়ে সাফাই দিতে গিয়ে কঙ্গনার যুক্তি, “সফট পর্ন’ বা ‘পর্ন স্টার’ কি আপত্তিকর শব্দ? এটি এমন একটি শব্দ যা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তা কখনোই আপত্তিকর শব্দ নয়। ভারতে পর্ন তারকারা যে পরিমাণ সম্মান পান, সানি লিওনিকে জিজ্ঞেস করুন, বিশ্বের আর কোনও দেশে তা হয় না।” অর্থাৎ নিজের মন্তব্য থেকে আদৌ সরছেন না কঙ্গনা।
আরও শুনুন:
ভোট বড় বালাই! চলছে কু-কথায় শোকজের মরশুম, কিন্তু অন্য সময়?
কথা হল, যে কোনও পেশাকেই সম্মান করা উচিত। কোনও মানুষ যে পেশাই গ্রহণ করুন না কেন, তিনিও সম্মান পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু চাইলেই কি কাউকে কোনও একটি বিশেষ পেশার মানুষ বলে দাগিয়ে দেওয়া চলে? কঙ্গনা যে যুক্তিতে পর্নস্টারদের সম্মানের কথা বলছেন, সেই একই যুক্তি তো খাটে যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু যিনি সে কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন, তাঁকে সম্মান দেখানো জরুরি। অন্য যে কাউকে ইচ্ছেমতো সেই তকমা দেওয়াটা আদৌ কাজের সম্মান বাড়ায় না। বরং শব্দপ্রয়োগের ধরন থেকেই বোঝা যায়, তার নেপথ্যে কী ভাবনা রয়েছে। বোঝাই যায়, কাজটির সঙ্গে জুড়ে থাকা যৌনতাকে ইঙ্গিত করেই সেই নারীদের চরিত্রের প্রতিই টান পড়ছে এখানে। অর্থাৎ সেই পেশার সঙ্গে যুক্ত নারীকে সম্মান দেওয়ার বদলে ওই পেশার আড়াল নিয়ে কোনও নারীকে অসম্মানই দেখানো হচ্ছে আদতে। কোনও নারীকে বিরোধিতা করতে গিয়ে যৌনকর্মী বলা হোক কি পর্নস্টারই বলা হোক, আদতে তা একই মুদ্রার দুই পিঠ। কিন্তু ভোটের বাজার বলেই একটি মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক হবে, আর অন্যটি অবমাননার দায় থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে, এ এক আশ্চর্য দাঁড়িপাল্লা। ভোট ছাড়া বাকি সময় নালিশের ভয় নেই বলেই আদর্শ রক্ষার দায়ও থাকবে না, এও কাজের কথা নয়। আবার সেই দায় না মানলেও শাসকের ছাতায় খানিক ছায়া মিলবে, এমন আশ্বাসও আদতে আশঙ্কার। কেবল রাজনীতিতে নয়, কেবল নির্বাচনের সময়েও নয়, আচরণবিধির আদর্শ তো আসলে সবসময়েই, গোটা সমাজ জুড়েই লাগু থাকা প্রয়োজনীয়। দুই সমজাতীয় মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যে এমন হেরফের জারি থাকছে, তা আসলে সেই আচরণবিধির গুরুত্বকেই আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।