ভোটে দাঁড়াবেন এবং হারবেন। আজব এই নেশা যে কারোর থাকতে পারে, তা সাধারণত কেউ ভেবেই উঠতে পারেন না। কিন্তু এমন কাজেই প্রায় রেকর্ড গড়তে চলেছেন এক ব্যক্তি। এই নিয়ে নয় নয় করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন ৯৩ বার। হেরেওছেন প্রতিবার। আপাতত পরাজয়ের সেঞ্চুরি হাঁকানোই লক্ষ্য মানুষটির। আসুন, শুনে নিই তাঁর কথা।
লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত – ভোট যেমনই হোক না কেন, তাঁর রেকর্ড অক্ষুণ্ণ। অর্থাৎ ভোটে দাঁড়ানো এবং হারা। এতে অবশ্য তাঁর কোনও হতাশাও নেই। আর পরেরবার ভোটে দাঁড়াতে তিনি দ্বিধাও করেন না। কেননা যাঁর কথা হচ্ছে, তিনি তো জিততে ভোটে দাঁড়ান না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হারার জন্যেই।
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, তথ্য-পরিসংখ্যানের বাস্তব যা বলছে, তা গল্পের থেকে কম কিছু নয়। ভোটে হারার নেশায় মশগুল এই ব্যক্তির নাম হাসনুরাম অম্বেদকারী। বয়স ৭৫। একসময় চাকরি করতেন রাজস্ব দপ্তরে। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন সেই ১৯৮৫ সালে। সেবার যে হারার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন তা নয়। কিন্তু ফল বেরোলে দেখা গেল শোচনীয় পরাজয় হয়েছে হাসনুরামের। একটি ভোটও তিনি পাননি। এমনকী নিজের স্ত্রী-ও তাঁকে তাঁর ভোটটি দেননি। সেই থেকে যেন জেদ চেপে গেল হাসনুরামের। সেবারই ঠিক করে নেন, এরপর থেকে যেরকমই ভোট হোক না কেন, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আর এবার থেকে আর জেতার চিন্তা করবেন না। সবাই তো জেতার জন্যই ভোটে দাঁড়ায়। তিনি নয় হারার দলেই থাকবেন।
আরও শুনুন: আজব কাণ্ড পাকিস্তানে! গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই ডিউটি শেষ, প্লেন চালাতে নারাজ পাইলট
তা নিজের জেদ বেশ ভালই বজায় রেখেছেন তিনি। ইতিমধ্যে ৯৩ বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। প্রতিবারই উপহার পেয়েছেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত পরাজয়। তবে হারার জন্য ভোটে দাঁড়ালেও কিন্তু লক্ষ্য ছোট করেননি হাসনুরাম। হারতেই যখন হবে, তখন সবরকম ভোটে হারাই ভাল। একবার তাই রাষ্ট্রপতি পদের জন্যও লড়বেন বলে মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু সেবার তাঁর নমিনেশন বাতিল হয়। কী আর করা যাবে! রাষ্ট্রপতি পদে লড়ে হারা হল না হাসনুরামের। কিন্তু তিনি তো থেমে থাকার পাত্র নন। তারপরেও একের পর এক ভোটে তারপরেও দাঁড়িয়েছেন। এই তো ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। যথারীত কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন হাসনুরাম। হ্যাঁ, এবারও তিনি ভোটে লড়ছেন। এবং বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচারও শুরু করেছেন। তবে, লক্ষ্য জেতা নয়, অবশ্যই হেরে যাওয়া। এমনিতে বহুজন সমাজবাদী পার্টির সদস্য হাসনুরাম। তবে পার্টির হয়ে তিনি ভোটে দাঁড়ান না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নির্দল প্রার্থী হিসাবে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
আরও শুনুন: চুরি করতে গিয়ে পেল খিদে, গেরস্থের রান্নাঘরেই খিচুড়ি রান্না চোরের, অতঃপর…
তবে মানুষটা যে ব্যতিক্রমী সে তো বোঝাই যাচ্ছে। শোনা যায়, সেই প্রথমবার ভোটে হেরে ভারি দুঃখ পেয়েছিলেন হাসনুরাম। নিজের স্ত্রীর ভোটটি না পাওয়ায় তাঁর মন ভেঙেছিল সম্ভবত। তারপরই হারের জন্য ভোটে দাঁড়ানোটা একেবারে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। আর এখন তাঁর লক্ষ্য, পরাজয়ের সেঞ্চুরি হাঁকানো। লক্ষ্যের অনেকটা কাছাকাছিও চলে এসেছেন তিনি। এবারের ভোটে হারলে তাঁর স্কোর হবে ৯৪। যে দেশে ভোটে জেতার জন্য কী না কী করে থাকেন নেতা-নেত্রীরা, সেখানে হারার জন্য ভোটে দাঁড়ানোর গল্প সত্যি অবাক করার মতোই। নিতান্ত সাধারণ মানুষ হাসনুরাম। এই পৃথিবীতে নানা ক্ষেত্রে প্রতিদিন হেরে যায় অসংখ্য মানুষ। হাসনুরাম যেন তাঁদেরই সার্থক প্রতিনিধি। তবে হেরে যাওয়াকেও যে এভাবে বড় করে তোলা যায়, হারই যে উদযাপনের বিষয় হয়ে উঠতে পারে, তা হাসনুরাম মতো কে আর দেখিয়ে দিতে পেরেছে! প্রতিবার ভোটে হেরে হাসনুরাম যেন বলে দেন, এ পৃথিবীতে জিতে যাওয়ার কাহিনি শুধু নয়, হেরে যাওয়ার গল্পও একদিন বড় হয়ে উঠতে পারে।