যে-কোনও ধর্মই বলে ত্যাগস্বীকারের কথা। কৃচ্ছ্রসাধনের পথেই ধর্মের প্রকৃত উপলব্ধি, এ-কথাও বলেন জ্ঞানীজনরা। আর তাই নিজের ধর্মকে যাঁরা শ্রদ্ধা করেন, তাঁরা সেই পথ-ই অনুসরণ করেন। সম্প্রতি তা মনে করিয়ে দিলেন এক ইসলাম ধর্মাবলম্বী ব্রিটিশ ব্যক্তি। শুধু হজ করতে মক্কাই যাননি তিনি, দীর্ঘ পদযাত্রায় দিয়েছেন এক বার্তাও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না। এ কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন ধার্মিক মানুষেরা। ঈশ্বরকে পাওয়ার তাগিদে শরীরের কষ্টকে তুচ্ছ করেন তাঁরা। যেমনটা করেছেন এই ব্যক্তিও। পায়ে হেঁটেই দশ-দশটি দেশ পার করেছেন ব্রিটেনের এই বাসিন্দা। পাড়ি দিয়েছেন প্রায় ৬,৫০০ কিলোমিটার। ২০২১ সালের ১ আগস্ট ইংল্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সম্প্রতি গন্তব্য মক্কায় পৌঁছে সে যাত্রায় ইতি টেনেছেন তিনি।
আরও শুনুন: জলমগ্ন মুম্বইয়ে ফের ত্রাতা সোনু, ১০০০ বর্ষাতি উপহার পুলিশকে
আসলে খাতায় কলমে ব্রিটেনের নাগরিক হলেও, জন্মসূত্রে তিনি ইরাকি-কুর্দি বংশোদ্ভূত। ৫২ বছরের ওই ব্যক্তির নাম অ্যাডাম মহম্মদ। যে কোনও ধর্মপ্রাণ মুসলিমের মতোই হজে যাওয়ার একান্ত ইচ্ছা ছিল তাঁর। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের পবিত্র তীর্থস্থান মক্কায় পৌঁছনো। কিন্তু কোনোরকম সুবিধাজনক উপায়ে নয়, বরং কৃচ্ছ্রসাধনের মধ্যে দিয়েই সেই পথ অতিক্রম করতে চেয়েছিলেন তিনি। পাশাপাশি শান্তি ও সাম্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াও ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেই কারণেই ইংল্যান্ডের উলভারহ্যাম্পটনে তাঁর বাড়ি থেকে শুরু করে মক্কা পর্যন্ত গোটা পথ হেঁটেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অ্যাডাম। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, লেবানন, জর্ডন- মোট ন’টি দেশ পেরিয়ে তিনি অবশেষে সৌদি আরবে পৌঁছন। অ্যাডাম জানিয়েছেন, প্রতি দিন গড়ে তিনি ১৭.৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে পার করতেন তিনি। টানা ১০ মাস ২৫ দিন হাঁটার পর অবশেষে মক্কায় পৌঁছান অ্যাডাম। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাঁর এই যাত্রাটি সম্প্রচার করেছেন অ্যাডাম, যা দেখে নেটিজেনদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ ভেসে এসেছে তাঁর প্রতি।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় অ্যাডামের সঙ্গে ছিল কেবল নিজের হাতে বানানো একটি ঠেলাগাড়ি। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা ছাড়াও ওই ঠেলাটিকে আরও একটি প্রয়োজনে ব্যবহার করেছিলেন তিনি। গাড়ির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল স্পিকার, আর তার মাধ্যমেই ইসলামের শান্তি ও সাম্যের বিভিন্ন বাণী সম্প্রচার করে চলেছিলেন অ্যাডাম। এইভাবেই যাত্রাপথে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন বলেই দাবি অ্যাডামের। তাঁর মতে, অর্থ কিংবা খ্যাতির লোভে এই কাজ করার কথা ভাবেননি তিনি। বরং জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষই যে সমান, এই কথা তুলে ধরাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। বিশ্বজোড়া অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপটে শান্তির বার্তাই সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন অ্যাডাম মহম্মদ।