প্রতি সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ। নারায়ণ মূর্তির প্রস্তাবে এই মুহূর্তে তুমুল বিতর্ক। তবে, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও তো দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। তাহলে? তাঁকে সামনে রেখেই এবার মূর্তির পাশে দাঁড়ালেন সজ্জন জিন্দাল। কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নিই।
সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ! ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি এ-কথা বলা মাত্রই শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করানোর বার্তা যে আদতে শ্রমিকের অধিকার হরণেরই কৌশল, এই অভিযোগে সরব দেশের বহু মানুষ। চলছে তর্ক-বিতর্ক। তবে, এই প্রস্তাবকে সমর্থনই করেছেন JSW গ্রুপের চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দাল। আর এক্ষেত্রে তিনি টেনেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদাহরণ।
আরও শুনুন: ১০০ টাকা আবার ঘুষ নাকি! আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস সরকারি অফিসার
নেটদুনিয়া থেকে বিভিন্ন মহলে যখন প্রবল সমালোচিত হচ্ছেন নারায়ণ মূর্তি, তখন তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন সজ্জন জিন্দাল। তাঁর মতে, আমাদের দেশ যেভাবে দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে এগোচ্ছে, সেখানে সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজের সংস্কৃতি যথেষ্ট নয়। শুধু কাজ হিসাবে তিনি তাই এই প্রস্তাবকে ধরছেন না, বরং তাঁর কাছে এই কাজ আসলে কর্তব্যের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করা। আর তাই মন থেকেই তিনি অভিজ্ঞ নারায়ণ মূর্তির প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। স্রেফ সমর্থন নয়। তিনি এই প্রসঙ্গে টেনে এনেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে। তাঁর বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নিজেও তো দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। তিনি, অর্থাৎ সজ্জন জিন্দাল নিজে দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণতা কজা করেন। আর তাই তাঁর দাবি, দেশ গঠনের জন্য এই ‘প্যাশন’ অত্যন্ত জরুরি।
I whole heartedly endorse Mr. Narayana Murthy’s statement. It’s not about burnout, it’s about dedication. We have to make India an economic superpower that we can all be proud of. #India2047
— Sajjan Jindal (@sajjanjindal) October 27, 2023
নারায়ণ মূর্তি আর সজ্জন জিন্দাল- দুজনের বক্তব্যেই দেশ গঠন বা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিকটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। নারায়ণ মূর্তি এক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে জাপান এবং জার্মানির প্রসঙ্গ টেনেছিলেন। সজ্জন জিন্দালের মতও অনেকটা সেই পথেই এগিয়েছে। তাঁর দাবি, আমাদের দেশের সম্পদ হল দেশের যুবশক্তি। আর তাই সেই শক্তি যদি পুরোমাত্রায় কর্তব্যে নিষ্ঠ থাকে, তাহলেই দেশের অগ্রগতি পাকা। উন্নত দেশগুলি বেশি অবসর ভোগ করার মতো জায়গায় আছে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশকে সেই জায়গায় পৌঁছতে গেলে দেশের যুবশক্তিকেই এগিয়ে আসতে হবে। বিলাস-বিনোদন থেকে কাজ ও কর্তব্যকে এগিয়ে রাখতে হবে। এমনটাই তাঁর মত এবং পরামর্শ।
India’s greatest strength is our youth. And in our journey to become a superpower, this generation has to prioritize work over leisure. As we progress, there will be opportunities for comfort, and the youth of 2047 will reap the benefits of our sacrifices and diligence.
— Sajjan Jindal (@sajjanjindal) October 27, 2023
নারায়ণ মূর্তির মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ওলা ক্যাবসের সহ-প্রতিষ্ঠাটা ভাবিশ আগরওয়ালাও। তবে, এর বিরুদ্ধমতও ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। দেশের স্বার্থে বেলাগাম শ্রমের কথা বলা হচ্ছে বটে, তবে, শ্রমিকের অধিকার বা স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নেরর দিকগুলি উহ্য থেকে যাচ্ছে এঁদের কথায়। সমালোচনার মূল অভিমুখ সেদিকেই। উপরন্তু বেঙ্গালুরুর এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, দীর্ঘক্ষণ কাজের দরুন তরুণ প্রজন্ম হৃদরোগের শিকারও হতে পারে। নারায়ণ মূর্তির মন্তব্যের সমালোচনা নানা দিক থেকেই হচ্ছে। তবে, দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথা সামনে রেখে তাঁর প্রস্তাবে যে স্পষ্ট সায় আছে, তা দ্ব্যর্থহীন ভাষাতেই জানিয়ে দিয়েছেন সজ্জন জিন্দাল।