ধর্মান্তরিত হয়েছেন স্বেচ্ছায়। কিন্তু সে ঘটনায় প্রবল আপত্তি গ্রামবাসীদের। আর তাই ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের ঘরছাড়া করা হয়েছে, পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে সবরকম যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি জানাল ধর্মান্তরিত সাতটি পরিবার। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? শুনে নিন।
ধর্ম কথার আসল অর্থ ধারণ করা। সেই মূল কথাটির দিক দিয়ে কোনও ধর্মের মধ্যেই হয়তো তেমন কোনও বিরোধ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্মাচরণের অধিকার নিয়ে বারে বারেই বিতর্ক উসকে ওঠে দেশে। সম্প্রতি ফের নতুন করে অস্বস্তি জাগাল তেমনই এক ঘটনা। যেখানে স্রেফ নিজেদের ইচ্ছামতো ধর্মাচরণ করতে চেয়েই গোটা গ্রামের কোপে পড়ে গিয়েছে সাতড়ি পরিবার। ওই পরিবারগুলির সদস্যরা জন্মসূত্রে যে ধর্মের অন্তর্গত, সেই ধর্মকে ত্যাগ করে নয়া ধর্মের আশ্রয় নেওয়াকে ভাল চোখে দেখেননি গ্রামবাসীরা। আর তার জেরেই তাঁরা ওই মানুষগুলিকে কার্যত একঘরে করে দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি জানিয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছে ওই পরিবারগুলি।
কী ঘটেছে ঠিক?
আরও শুনুন: স্ত্রীর হাতে ‘তিন তালাক’ আইন, বান্ধবীর অস্ত্র ‘লাভ জিহাদ’! ফাঁপরে পড়ে হিন্দু হতে চান মুসলিম যুবক
জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুতে। সেখানকার পুমপুহার এলাকার কাছাকাছি এক জেলেদের গ্রামেই বাস ওই সাত পরিবারের। জন্মসূত্রে হিন্দু হলেও একসময় খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা নিয়েছিলেন তাঁরা। আর সেখান থেকেই সব গোলযোগের সূত্রপাত। এই ধর্মান্তরের ঘটনা জানাজানি হওয়া মাত্রই ওই পরিবারগুলিকে গ্রাম থেকে বহিষ্কার করে দেয় গ্রাম পঞ্চায়েত। এবং সবরকম ভাবেই তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়। এই মানুষগুলির সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখেনি গ্রামের কেউ। এমনকি অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে খেলা করারও অধিকার নেই এই পরিবারের কোনও শিশুর। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের অসহযোগিতার দরুন টান পড়েছে রুটিরুজিতেও। ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তাঁদের মাছ ধরতে যেতে দেওয়া হয় না। যেহেতু এটাই তাঁদের পেশা, ফলে তা বন্ধ হওয়ার দরুন অত্যন্ত সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁদের। ওই এলাকার দোকান থেকে কোনোরকম জিনিস পর্যন্ত বিক্রি করা হয় না তাঁদের। দেওয়া হয় না অন্য কোনও সুযোগসুবিধাও। আর এই সবই চলছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। এতদিনেও সেই পরিস্থিতির কোনোরকম বদল ঘটেনি। উলটে বরাবরই তাঁদের হিন্দু ধর্মে ফেরা জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে, দাবি ওই পরিবারগুলির।
আরও শুনুন: অভিন্ন বিধিতে আপত্তি মুসলিম সংগঠনের, পালটা জবাব দিচ্ছেন মুসলিম মহিলারাই
এই পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করা যে রীতিমতো কঠিন, তা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই অবস্থায় এবার খোদ জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছে ওই পরিবারগুলি। ‘মার্সি কিলিং’, অর্থাৎ যে রীতিতে করুণা করেই কাউকে মৃত্যুর পথ বেছে নিতে দেওয়া হয়, সেই রীতি প্রয়োগ করা হোক তাঁদের উপরেও, আরজি ওই পরিবারগুলির। ঘটনায় স্তম্ভিত প্রশাসনও। ওই পরিবারগুলির অভিযোগের তদন্ত করা হবে, এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।