সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে, নারায়ণ মূর্তির এই প্রস্তাবে বিতর্কের ঝড় উঠেছে চাকরিজীবীদের মধ্যে। যদিও ইনফোসিস-কর্তার সুরে সুর মেলাচ্ছেন আরও একাধিক উদ্যোগপতি। তবে এর মধ্যেই কি অন্য সুর শোনা গেল হর্ষ গোয়েঙ্কার গলায়? যিনি উলটে রোজ অফিসে না যাওয়ার পক্ষেই সওয়াল করছেন? ঠিক কী বলছেন তিনি, শুনে নেওয়া যাক।
৭০ ঘণ্টা কাজের দাবির মধ্যেই হর্ষ গোয়েঙ্কার সাফ বক্তব্য, রোজ অফিসে যাওয়ার দিন শেষ। এখন আর সপ্তাহে ৫ দিন অফিসের বাঁধা রুটিন অনুসরণ করার দরকারই নেই। ৫০ ঘণ্টা কাজই হোক কি ৭০ ঘণ্টা, কাজের উন্নতিটাই আসল কথা। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ৭০ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাব, যা এমনিতেই আন্তর্জাতিক শ্রমনীতির বিরোধী, সেই প্রস্তাবের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছেন এই শিল্পপতি? ঠিক কী বলছেন গোয়েঙ্কা? তাহলে খুলেই বলা যাক।
আরও শুনুন: ৭০ ঘণ্টার থেকেও বেশি কাজ করে মেয়েরা, কথা হয় না তো! কটাক্ষ রাধিকার
সম্প্রতি ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তি বলেছেন, দেশের উন্নতির ভার তরুণদের উপরেই। তাই আর ধরাবাঁধা সময় মেপে কাজ নয়, বরং সপ্তাহে অন্তত ৭০ ঘণ্টা শ্রম দিতে হবে। দেশের স্বার্থেই নাকি এহেন প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই, সে প্রস্তাবে একযোগে সায় মিলেছে একের পর এক পুঁজিপতিদের। সজ্জন জিন্দাল যেমন খোদ প্রধানমন্ত্রীর উদাহরণ টেনে এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন, তেমনই মাহিন্দ্রা সিইও-র আবার দাবি, আসলে ৭০ ঘণ্টার মধ্যে ৩০ ঘণ্টা কাজ তো নিজের উন্নতির জন্যই। এই প্রেক্ষিতে এবার মুখ খুললেন আরেক শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কাও। কিন্তু তাঁর গলায় কি এর মধ্যেই খানিক ভিন্ন সুর শোনা গেল?
তা বোধহয় নয়। আরপিজি এন্টারপ্রাইজের চেয়ারম্যান এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছেন, আসলে অফিসের চার দেওয়ালের মধ্যেই কাজ করতে হবে, এমনটা বললে মুশকিল। বরং হাইব্রিড পদ্ধতিই হতে চলেছে আগামী দিনের কাজের ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ অফিস আর বাড়ির মধ্যে নিজের সুবিধামতো জায়গা বেছে নেওয়ার পক্ষেই সওয়াল তাঁর। তাঁর মতে, এখনই অনেক কর্মী তাঁদের মোট কাজের সময়ের অন্তত ৩৩ শতাংশ সময়ে কাজ করেন অফিসের বাইরে থেকে, একা একাই। একে তো যাতায়াতের খরচ ও সময় বাঁচে, তার উপর নিজের সময়মতো, নিজের সুবিধামতো জায়গা থেকে অফিসের কাজ করার সুযোগ থাকলে তাকে ৮ শতাংশ বেতনবৃদ্ধির সমান বলেও মনে করেন কর্মীরা- এমনটাই মত গোয়েঙ্কার। আসলে কাজের সময় কমানোর কথা যে তিনি বলেছেন, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেই বাড়তি সময়ে কর্মী কীভাবে কাজ করবেন, কোথা থেকে কাজ করবেন, তা ঠিক করার ভার কর্মীর উপরেই ছাড়তে চাইছেন তিনি। মনে করছেন, সেই সুবিধাটুকু পেলে বাড়তি কাজ নিয়ে আপত্তিও কমবে কর্মীদের।
আরও শুনুন: অনুপ্রেরণা খোদ প্রধানমন্ত্রী! সপ্তাহে ৭০ ঘণ্টা কাজের প্রস্তাবে সায় সজ্জন জিন্দালের
তবে এমনিতেই বর্তমানে বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজের যা ধরন, তাতে অলিখিতভাবেই অফিসের বাইরেও কাজ চলেই আসে। যে কাজ অফিসের সময়ের মধ্যে ধরা হয় না, ব্যক্তিগত জীবন থেকেই সেই সময় খরচ করতে হয় কর্মীকে। সেখানে সপ্তাহে একলাফে ৩০ ঘণ্টা কাজের সময় বাড়াতে চাওয়া কর্মীদের পক্ষে নানাভাবে ক্ষতিকর তো বটেই। কিন্তু অফিসের বদলে নিজের সুবিধামতো জায়গা থেকে কাজ করা যাচ্ছে, এই খুড়োর কল ঝুলিয়ে কি আদতে কর্মীদের আরও বেশি করে শ্রম দেওয়ার দিকেই ঠেলে দেওয়া হবে না? হর্ষ গোয়েঙ্কার বক্তব্যে কিন্তু আরও বেশি করে উসকে উঠছে সে আশঙ্কাই।