টিউমারের ওজন নাকি ৪৭ কেজি! আর এক মাস, দু মাস নয়, পাক্কা ১৮টি বছর ধরে সেই টিউমার বয়ে নিয়ে চলেছিলেন একজন! বিশ্বাস হচ্ছে না তো? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন। অর্থাৎ, বানিয়ে তোলা গল্পের চেয়েও বেশি চমকে দিতে পারে কোনও কোনও সত্যি ঘটনা। আর তেমনটাই বোধহয় বলা চলে গুজরাটের এই সাম্প্রতিক ঘটনাটির প্রসঙ্গে।
আরও শুনুন: সোনার হার তাঁর সিগনেচার, কেন হার এত পছন্দ করতেন বাপি লাহিড়ী?
টিউমার শব্দটি আজ আর আমাদের কাছে অচেনা নয়। আর তাই আমরা এ কথাও জেনে গিয়েছি, টিউমার তথা শরীরের কোনও উপবৃদ্ধি মাত্রেই ভয়ংকর নয়। বিপদের আশঙ্কা ডেকে আনে সেই টিউমারগুলিই, যারা মারণরোগ ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে উসকে দেয়। ক্যান্সারের কোনও অ্যানসার নেই, লিখেছিলেন শিবরাম চক্রবর্তী। তাই টিউমার ধরা পড়লেই আগেভাগে তার ম্যালিগন্যান্সি বা মারণক্ষমতা পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন চিকিৎসকেরা। যেমন পরামর্শ দিয়েছিলেন গুজরাটের আমেদাবাদ শহরের বাসিন্দা এই মহিলাকেও। মহিলার ওজন বেড়ে যাচ্ছিল হঠাৎ করে, বিশেষ করে পেটের কাছে অহেতুক মেদবৃদ্ধি ঘটছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করিয়ে দেখা গেল, সেখানে বাসা বেঁধেছে একটি টিউমার। তবে পরীক্ষা করে দেখা গেল সে বেশ শান্তশিষ্ট নিরীহ, অর্থাৎ বিনাইন। ক্যান্সারের আশঙ্কা নেই দেখে খানিক নিশ্চিন্ত হওয়া গেল বটে, কিন্তু শরীরে একটি অবাঞ্ছিত অতিথি বয়ে বেড়াতে কারই বা ভাল লাগে! অতএব, কথা উঠল অপারেশনের। আর এখানেই বাঁধল গোল। দেখা গেল, শরীরের ভেতরের যন্ত্রপাতির সঙ্গে তিনি এমনই বন্ধুত্ব পাতিয়ে বসেছেন যে সেখান থেকে তাঁকে বের করে আনে কার সাধ্যি! অপারেশন করলে অন্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন চিকিৎসকেরা।
আরও শুনুন : বাজল বাজনা, ঘর সাজল বিয়েবাড়ির মতো, কফিনবন্দি তরুণ জওয়ানের জন্য আয়োজন মা-বাবার
তার পর কেটে গিয়েছে ১৮টি বছর। মানুষ দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বাড়ে, টিউমারই বা বাড়বে না কেন! দেখতে দেখতে তার ওজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৪৭ কেজি। ৫৬ বছর বয়সি ওই মহিলার চলাফেরা, ওঠাবসা, এক কথায় জীবনযাপনই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওই বিশাল টিউমারের দৌলতে। টিউমারের জন্য নিজেদের জায়গা থেকে সরে যাচ্ছিল হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, জরায়ু, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিও। অবশেষে আর কোনও উপায় না দেখে অপারেশনের কথা ভাবেন চিকিৎসকেরা। সৌভাগ্যই বলতে হবে, সফল হয় এই জটিল অস্ত্রোপচারটি। কেবল ৪৭ কেজি ওজনের টিউমারই নয়, তার সঙ্গে কোশ এবং অতিরিক্ত ত্বকের অংশ মিলে মহিলার শরীর থেকে কতখানি ওজন বাদ পড়েছে জানেন? মোট ৫৪ কেজি! আর এই অস্ত্রোপচারের পর রোগীর ওজন হয়েছে ৪৯ কেজি, টিউমারের থেকে মাত্র দু কেজি বেশি। নিজের স্বাভাবিক জীবন ফেরত পেয়ে আনন্দে আত্মহারা রোগী। আর এমন বিরল অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় উৎসাহিত চিকিৎসকেরাও।