তীর্থযাত্রীদের যাওয়ার রাস্তা করাই লক্ষ্য। তার জন্য কয়েক হাজার গাছ যদি কাটা পড়ে, কী এসে যায়! তীব্র দাবদাহে দেশ যতই জ্বলেপুড়ে যাক, পরিবেশের ভাবনা এখনও বিশ বাঁও জলে।
শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। সে জীবের মধ্যে মানুষ থেকে প্রকৃতি, সকলেরই ঠাঁই হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে ধর্মের কাছে সকলেই ভারি তুচ্ছ হয়ে যেতে পারে সময়ে সময়ে। ধর্মের পথ গড়তে নিমেষে ধ্বংস করে দেওয়া চলে যা কিছু। সে ধ্বংস যত বড় বিপদই ডেকে আনুক না কেন! সম্প্রতি শোনা গেল, কেবল তীর্থযাত্রীদের যাত্রাপথ তৈরি করতেই প্রায় ৩৪ হাজার গাছ কেটে ফেলতে চাইছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। এ খবর আরও একবার বুঝিয়ে দিল, সাম্প্রতিক তাপপ্রবাহ আমাদের যতই পীড়িত করুক না কেন, ভাবনাচিন্তার জমাট শৈত্যকে গলাতে পারেনি একচুলও। তাই পরিবেশের সংকট যতই ঘনিয়ে আসুক বারবার, পরিবেশের ভাবনা এখনও বিশ বাঁও জলেই।
আরও শুনুন:
বন জ্বলছে, বনকর্মীরা ভোটের ডিউটিতে! পরিবেশ বাজি রেখেও চাই নির্বাচন?
জানা গিয়েছে, কানওয়ার যাত্রার কথা মাথায় রেখেই এ উদ্যোগ উত্তরপ্রদেশ সরকারের। উত্তর ভারতে কানওয়ার যাত্রা একটি বড় তীর্থযাত্রা। এই যাত্রায় দেশের উত্তর অংশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিব-ভক্তরা পাড়ি দেন হিন্দু ধর্মের পরম তীর্থ হরিদ্বারের দিকে। শ্রাবণ মাস পড়লেই কানওয়ার যাত্রায় শামিল হন অসংখ্য ভক্তরা। এর আগেও এই যাত্রার কারণে পথের পাশে মাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি, কিংবা আমিষ খাওয়ার কারণে এক শ্রেণির মানুষকে ঠাঁইনাড়া করার কথা আগেও ভেবেছিল যোগী সরকার। এবার ভক্তদের জন্যই গাজিয়াবাদ, মিরাট ও মুজফফরনগর, এই তিন জেলা জুড়ে ১১১ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। জানা যাচ্ছে, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে হলে কাটা পড়বে অন্তত ৩৩ হাজার ৭৭৬টি পূর্ণবয়স্ক গাছ এবং ৭৮ হাজার ৯৪৬টি গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। সোজা কথায় এক বিরাট অংশের সবুজ স্রেফ মুছে ফেলা হবে ভক্তদের যাত্রাপথ সুগম করতে।
চলতি বছরের শুরুতেই এই খবর জেনে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরু করেছিল ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল। তার উত্তরেই সম্প্রতি যাবতীয় হিসেব দাখিল করেছে যোগীরাজ্যের সরকার। যদিও গাছ কাটার ব্যাপারে পিছু হটতে নারাজ তারা। উলটে মোটামুটি লাখ পাঁচেক বৃক্ষরোপণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে নতুন গাছ লাগিয়েই দায় এড়াতে তৎপর প্রশাসন। যদিও পরিবেশবিজ্ঞানীরা বারেবারেই বলে থাকেন, একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের থেকে যা উপকার মেলে, সদ্য লাগানো একটি চারা তার তুলনাতেই আসে না। কিন্তু সেসব যুক্তি তথ্য তলিয়ে যাচ্ছে উদাসীনতার ঘূর্ণিতেই।
আরও শুনুন:
গুঁড়ো মশলায় ভেজাল-বিষ! গোটা মশলাতেই ফেরার পরামর্শ দিচ্ছে ICMR
এমনই এক সময়ে এ তথ্য সামনে এসেছে, যখন কার্যত আগুনে পুড়ছে দেশ। কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজকর্মে পরিবেশের হাল যে আমরা দীর্ঘদিনই বেহাল করে তুলেছি, সে কথা তো আর নতুন নয়। একাধিকবার ভূমিধস, হড়পা বান সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের আগুন গরমের জেরেও সে কথা উঠে আসছে বারবার। বিগত দিনকয়েকে তীব্র দাবদাহের জেরেই উত্তরপ্রদেশে প্রাণ হারিয়েছেন একের পর এক মানুষ। কিন্তু সেই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও, হাজার হাজার গাছ কেটে প্রকৃতির সবুজ আচ্ছাদনকে আরও অনেকটা ছিঁড়ে দিতে পিছপা নই আমরা। আমাদের সেই আত্মধ্বংসী প্রবণতাকেই আবার চিনিয়ে দিল এই খবর।