গুজরাটের সাম্প্রদায়িক হিংসা নিয়ে তৈরি বিবিসি-র তথ্যচিত্রের বিরুদ্ধে এবার সুর চড়ালেন প্রাক্তন বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনীর আধিকারিক সহ অন্তত ৩০০ জন স্বনামধন্য ব্যক্তি। সম্প্রতি যৌথভাবে লেখা এক খোলা চিঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটিকে রীতিমতো একহাত নিয়েছেন তাঁরা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গুজরাট হিংসা অবলম্বনে তৈরি বিবিসি-র সাম্প্রতিক তথ্যচিত্র নিয়ে শুরু হয়েছ বিতর্ক। ভারতে এই তথ্যচিত্র দেখানোর বিষয়ে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এই ইস্যুতে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিরই পাশে দাঁড়ালেন দেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রের অন্তত শ-তিনেক ব্যক্তিত্ব। ভারতের প্রতি একপেশে নিচু ধারণা থেকেই এহেন তথ্যচিত্রের উদ্ভব, এমনটাই মত তাঁদের। তাঁদের দাবি, গুজরাট হিংসা বিষয়ে একটি বানানো বা কাল্পনিক ধারণা প্রচার করার উদ্দেশ্যেই এই বিতর্কিত তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে, যা আদতে এ দেশ এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়াতে চায়। এই মর্মে যৌথভাবে লেখা এক খোলা চিঠিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির উদ্দেশে তোপ দেগেছেন প্রাক্তন বিচারপতি, রাষ্ট্রদূত, সেনাবাহিনীর আধিকারিক সহ মোট ৩০২ জন।
আরও শুনুন: গুজরাটে জয় ১৫৬ আসনে, ১৫৬ গ্রাম সোনা দিয়েই ‘সোনার মোদি’ বানালেন ব্যবসায়ী
দু-দশক আগে গুজরাটে যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ছবি দেখা গিয়েছিল, সে কথাই তুলে ধরেছে বিবিসির তথ্যচিত্র ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’। সেই সময়ে সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। বিবিসি-র তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, ভারতের সখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু দুই সম্প্রদায়, অর্থাৎ হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভাব নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই টানাপোড়েনের নেপথ্যে নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। আর সেই বিষয়টিকেই তুলে ধরতে চেয়েছে ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’। এই বক্তব্যকেই সমর্থন করে বিরোধী নেতাদের দাবি, নরেন্দ্র মোদি সংখ্যালঘুদের প্রতি যে আচরণ করেছেন, তাই ফুটে উঠেছে এই তথ্যচিত্রে। কিন্তু এবার সেই দাবির পালটা দিলেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তাঁদের মতে, ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে এই তথ্যচিত্রটি তৈরি। ব্রিটিশ আমলে যেভাবে ভারতীয়দের হীন চোখে দেখা হত, তারই ছাপ রয়েছে এখানে। বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে বারবার ‘বলা হয়ে থাকে’, কিংবা ‘মনে করা হয়’ এমন শব্দবন্ধের ব্যবহার দেখা গিয়েছে। যাকে হাতিয়ার করে এই চিঠিতে দাবি তোলা হয়েছে, আসলে গবেষণা নয়, কিছু মনগড়া ধারণার উপর ভিত্তি করেই বানানো ‘দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যে যাকেই ভোট দিক না কেন, প্রধানমন্ত্রী তো গোটা দেশেরই প্রধানমন্ত্রী। কেউ নিজের ধারনার বশবর্তী হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিদ্রুপ করবেন, তা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
আরও শুনুন: বোরখা পরে কলেজে ঢুকতে বাধা মুসলিম ছাত্রীদের, উঠল বোরখাকেও ‘ইউনিফর্ম’ করার দাবি
ইতিমধ্যেই গুজরাট হিংসা মামলায় দেশের শীর্ষ আদালতে ক্লিনচিট পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। সিটের দীর্ঘ তদন্তের পর ৪৫২ পাতার রায় পেশ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই ইস্যু সংক্রান্ত আর কোনও মামলা গ্রহণ করা হবে না। সেই প্রসঙ্গ টেনে এই চিঠির অভিযোগ, সুপ্রিম রায় তথা একটি দেশের সর্বোচ্চ আইনি কেন্দ্রের অভিমতকেই নাকচ করেছে বিবিসি। একে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কুকীর্তি’ বলে বিবিসির বিরুদ্ধে কড়া আক্রমণ শানিয়েছেন ওই ব্যক্তিরা। তথ্যচিত্র-বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে যতই কটাক্ষ করুন বিরোধী নেতারা, এই ‘হেভিওয়েট’ চিঠি আপাতত কেন্দ্রের তুরুপের তাস, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।