পুরোহিত হওয়ার জন্য জাতপাতের বাধা ভেঙেছিল আগেই। এবার প্রথম মহিলা পুরোহিত নিয়োগ করতে চলেছে তামিলনাড়ু সরকার। সনাতন ধর্ম বিতর্কের মাঝে এই মর্মেই টুইট করলেন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পুরোহিত হওয়ার অধিকার কেবল ব্রাহ্মণ এবং পুরুষদেরই, এমনই এক ধারণা মোটামুটি প্রচলিত রয়েছে সমাজে। কিন্তু সেই ধারণাকে ভেঙেই এবার পৌরোহিত্যের কাজ করছেন কোনও কোনও নারীও। তেমনই তিন নারীকে সম্প্রতি সরকারিভাবেই পুরোহিত হিসাবে নিয়োগ করতে চলেছে তামিলনাড়ু। সনাতন ধর্ম বিতর্কে যখন স্ট্যালিনপুত্র উদয়ানিধিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, সেই সময়েই এই পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সনাতনীদের একহাত নিলেন দক্ষিণের অনেকেই। ‘এই তো আসল সনাতন ধর্ম, নাকি?’ এই মর্মে টুইট করে সঙ্গীতজ্ঞ টিএম কৃষ্ণা যেমন কটাক্ষ ছুড়েছেন, এই পদক্ষেপে নিশ্চয়ই খুশি হবেন সনাতনীরা। এই ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিনেরও বক্তব্য, যেখানে মেয়েদের অশুচি বলে মনে করে অনেক ধর্মীয় কেন্দ্রই, সেখানে এই পদক্ষেপ রীতিমতো কৃতিত্বের।
আরও শুনুন: সনাতন ধর্ম ইস্যুতে অনড়, মশা মারা কয়েলের ছবি দিয়ে বিজেপিকে একহাত স্ট্যালিন-পুত্রের
কৃষ্ণাবেণী, এস রম্যা, এন রঞ্জিথা- এই তিনজন নারীকেই পুরোহিত হিসেবে শংসাপত্র দিয়েছে তামিনলাড়ু সরকার। রাজ্য সরকারের হিন্দু রিলিজিয়াস অ্যান্ড চ্যারিটেবল এনডাওমেন্টস ডিপার্টমেন্ট থেকে মন্দিরের পুরোহিত হওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ওই তিন মহিলা। সত্যি বলতে দক্ষিণের এই রাজ্যটিতে ছটি পুরোহিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চলে, যেখানে তথাকথিত উঁচু জাত নিচু জাত নির্বিশেষে যে কোনও শ্রেণির পুরুষরাই পুরোহিত হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। তবে এই প্রথম এই কোর্সে যোগ দিয়েছিলেন কোনও মহিলা। এক বছরের কোর্স করার জন্য ৩০০০ টাকা করে বৃত্তিও মিলেছে তাঁদের। বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর হওয়ার জন্য এই প্রশিক্ষণ নেন এস রম্যা। অঙ্কে স্নাতক কৃষ্ণাবেণীর বক্তব্য, তিনি ঈশ্বর এবং মানুষের সেবা করতে চেয়েছিলেন, এবং সেইজন্যই এই পথ বেছে নিয়েছেন। রম্যা এবং কৃষ্ণাবেণী একে অপরের আত্মীয়। তাঁদের এই কাজে সমর্থন ছিল পরিবারেরও। আর নিজের কৌতূহল থেকেই এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এন রঞ্জিথা।
সনাতন ধর্মের বৈষম্য নিয়ে উদয়ানিধির মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সম্প্রতি আক্রমণের ঝাঁজ বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। সেখানে ন্যায় ও সাম্যের বিরোধী সনাতন ধর্মের আদর্শকে মুছে ফেলার কথা বলেছিলেন স্ট্যালিনপুত্র। এই পরিস্থিতিতে পুরোহিত নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে কার্যত বৈষম্যকে মুছে ফেলার পক্ষেই সওয়াল করল তামিলনাড়ু সরকার। স্ট্যালিনের সাফ কথা, বিমান চালানো কিংবা মহাকাশ অভিযানেও এখন কৃতিত্ব রাখছেন মেয়েরা, কিন্তু তারপরেও অনেক মন্দিরে তাঁদের অশুচি বলে দাগিয়ে দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয় না পর্যন্ত। সেই বৈষম্য মুছেই বদল আনতে চাইছে তাঁর সরকার। তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সালে তামিলনাড়ুর সমাজসংস্কারক পেরিয়ার সমস্ত শ্রেণির মানুষকে মন্দিরে ঢুকতে দেওয়ার ডাক দিয়েছিলেন, সেই আদর্শেই গ্রহিষ্ণুতা এবং সাম্যের নতুন সংজ্ঞা গড়ছে তামিলনাড়ু।