বিশ্বের দরবারে সনাতন ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছিলেন স্বামী বিবাকানন্দ। ১৮৯৩ সালে শিকাগোর ধর্মমহাসভায় তিনি অগণিত দর্শককে সম্ভাষণ করেছিলেন নিজের ভাইবোন বলেই। নবীন সন্ন্যাসীর কথায় সেদিন মোহিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। একথা আমরা সকলেই জানি, নিজের জ্ঞানচক্ষুর উন্মোচনের কারিগর হিসেবে স্বামীজি বরাবর উল্লেখ করেন তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের কথা। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ১২৫ বছরের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এবার সেই শিকাগো শহরেই প্রতিষ্ঠা করা হল, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের মূর্তি। শুধু তাই নয় এই মুহূর্তে এটিই বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঠাকুরের মূর্তি।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে রামকৃষ্ণ মঠের ভূমিকা বরাবরই অনস্বীকার্য। সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রতিটি উৎসবের পাশাপাশি নানকজয়ন্তী, খ্রিস্টমাসের মতো উৎসবও সেখানে যথেষ্ট নিষ্ঠাভরেই পালন করা হয়। এ ছাড়াও আমরা প্রায়ই দেখি বিভিন্ন সামাজিক কাজে বরাবরই প্রথম সারিতে এগিয়ে আসেন এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা। সম্প্রতি এই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন পদার্পণ করেছে ১২৫ তম বর্ষে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতেই এর কার্যালয় ছড়িয়ে আছে। সেই উদযাপন সর্বত্রই।
এই উপলক্ষেই আমেরিকার শিকাগো শহরে সর্বধর্মসমন্বয়ের একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘হোম অফ হারমনি’। উদ্দেশ্য প্রত্যেকের কাছে ধর্মের মূলকথা অর্থাৎ সরবধর্মসমন্বয়ের বার্তা তুলে ধরা। এরই অঙ্গ হিসাবে, সোসাইটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হল, ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের একটি মূর্তি। বর্তমানে যা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রামকৃষ্ণ মূর্তি বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও শুনুন: এই বনে রাসলীলায় মাতেন রাধাকৃষ্ণ, অলৌকিক রহস্যের ঠিকানা বৃন্দাবনের নিধুবন
বর্তমান পৃথিবীর এই সাম্প্রদায়িক অশান্তির পরিবেশে, সর্বধর্মসমন্বয়ের বার্তা নিয়ে এক নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার ডাক দিয়েছে বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি অফ শিকাগো। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ স্বামী ঈশাত্মানন্দ মহারাজের পরিকল্পনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমই জন্ম দিয়েছে এই ‘হোম অফ হারমনি’র। পৃষ্ঠপোষকতা ও দেখভালের অভাবে প্রায় নষ্ট হতে চলা এক গির্জাকেই নবরূপে সজ্জিত করে গড়ে তোলা হয়েছে ‘হোম অফ হারমনি’। এই ভবনটিতেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ঠাকুরের মূর্তিটি। যা উচ্চতায় ২২ ফুট। এই মূর্তিটি স্বামী ঈশাত্মানন্দ মহারাজের পরিকল্পনায় কলকাতা থেকে তাঁর শিষ্য অনুপ পান তৈরি করে পাঠান শিকাগোয়। মূর্তি উদ্বোধনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন দেশের সন্ন্যাসী মহারাজরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মের ধর্ম-প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট গুণীজনেরা, যাঁরা সকলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার বার্তা নিয়ে এক নতুন পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এই মূর্তি উন্মোচন উপলক্ষ্যে প্রদর্শিত হয় স্বামীজির জীবন আধারিত একটি তথ্যচিত্র – Swami Vivekananda- A Bridge between the East and The West.
শ্রী রামকৃষ্ণের পাশাপাশি শ্রীমা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিও রয়েছে এই ভবনে। নানা কর্মসূচিতে ঠাকুরের সর্বধর্মসমন্বয়ের মহান বার্তা আবিশ্ব ছড়িয়ে দেওয়াই লক্ষ্য এই সোসাইটির।