২১ জুলাই-এর সমাবেশ দেশীয় রাজনীতিতে নজির। একজন নেত্রী একার কৃতিত্বে প্রতিবছর একই দিনে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে চলেছেন, মানুষ একইভাবে তাঁর সভায় আসছে, এটা রেকর্ড। লিখছেন, কিংশুক প্রামাণিক।
সব রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ বাৎসরিক কর্মসূচি থাকে। সিপিএম-এর যেমন নভেম্বর বিপ্লব দিবস, বিজেপির শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন, তেমন কংগ্রেসের বরেণ্য নেতাদের জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন ইত্যাদি। কিন্তু সেই সব দিনে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে সমাবেশ করার নজির কোনও দলেরই নেই। কোনও আঞ্চলিক দলেরও নেই। সেই অর্থে ২১ জুলাই-এর সমাবেশ দেশীয় রাজনীতিতে নজির। একজন নেত্রী একার কৃতিত্বে প্রতিবছর একই দিনে বিশাল বিশাল সমাবেশ করে চলেছেন, মানুষ একইভাবে তাঁর সভায় আসছে, এটা রেকর্ড।
১৯৮৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম-এর ব্যারিস্টার নেতা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের গরিব ঘর থেকে উঠে আসা একটি অতি সাধারণ মেয়ে। তারপর অবশ্য ১৯৮৯ সালে তিনি ওই কেন্দ্রে মালিনী ভট্টাচার্যর কাছে পরাজিত হন। ১৯৯১ সালে দক্ষিণ কলকাতা থেকে আবার তিনি নির্বাচিত। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত মমতা লোকসভা নির্বাচনে অপরাজিত।
সোমনাথবাবুকে হারানোর পর পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এলেও তাঁকে বিরোধী নেত্রীর আসনে বসিয়ে দেয় ১৯৯৩ আসলের ২১ জুলাইয়ের মহাকরণ অভিযান আন্দোলন। আগের বছর অবশ্য যুব কংগ্রেস সভানেত্রী হিসাবে ব্রিগেড সমাবেশে বামফ্রন্টের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে মমতা প্রমাণ করেছিলেন কংগ্রেসের মধ্যে তাঁর আলাদা জায়গা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাঁকে সমর্থন করছে হাজার হাজার সাধারণ কর্মী-সমর্থক। মহাকরণ অভিযানের ইস্যু ছিল, ‘নো এপিক, নো ভোট’। বাস্তবিকই যা পরবর্তীকালে ভারতীয় নির্বাচনী ব্যবস্থায় প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। গোটা দেশে তৈরি হয় সচিত্র পরিচয়পত্র।
আরও শুনুন: Petrol Price : জ্বালানি-জ্বালায় জর্জরিত জনতা, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কেন উদাসীন কেন্দ্র?
সেদিন মহাকরণ অভিযান রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল। পুলিশ গুলি চালায়। ১৩ জন নিহত হন। গুরুতর জখম হন মমতাও। যদিও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, যুব কংগ্রেস কর্মীরা বোমা হাতে রাইটার্স বিল্ডিং দখল করতে এসেছিল। পুলিশ আত্মরক্ষায় গুলি চালাতে বাধ্য হয়।
পরের বছর থেকে ওই দিনেই ১৩ জন শহিদকে স্মরণ করে সমাবেশ করেন মমতা। সেই বছর সভা হয়েছিল এসপ্ল্যানেড ইস্টে। পরের বছর থেকে ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে সভা শুরু হয়। বাম আমলে বার বার পুলিশি বাধা এসেছে। রাস্তার মধ্যে সভা করা নিয়ে অাইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সমাবেশের আবেগ, বিশালত্ব সব কিছুকে ম্লান করে।
১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পরও মমতা ২১ জুলাই সমাবেশে যুব তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানারে করতে শুরু করেন। ওই সময় কংগ্রেস নেতারা পাল্টা যুব কংগ্রেসের ব্যানারে ২১ জুলাই পালনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু গোটা ব্যাপারটা হাস্যকর রূপ নেয়। যে লড়াই মমতার হাতে গড়া, সেই অান্দোলন হাইজ্যাক করার চেষ্টা সফল হয়নি।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।