খুলতে হবে পোশাক। এমনই ফরমান এল খোদ শিক্ষিকার কাছ থেকে। বাধা দেওয়ার দরুন জুটল মারধরও। স্কুলের মধ্যেই এহেন হেনস্তার মুখে পড়ল দুই দলিত শিশুকন্যা। যা হয়তো আরও একবার প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল দেশের সংবিধানে উল্লিখিত ‘ইকুয়ালিটি’ তথা সমতার ধারণাকে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। কী ঘটেছে ঠিক? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
স্কুলের ভিতরে দাঁড়িয়েই স্কুল ইউনিফর্ম খোলার নির্দেশ দেওয়া হল চতুর্থ শ্রেণির দুই খুদে পড়ুয়াকে। ঘটনাচক্রে তারা দুজনেই মেয়ে। তাও অন্য কেউ নয়, দুই শিক্ষিকার কাছ থেকেই এহেন নির্দেশ পেয়েছিল ওই দুই ছাত্রী। স্বাভাবিকভাবেই সে কথায় আপত্তি জানিয়েছিল তারা। আর তাতেই আরও চড়া হল শাস্তির মাত্রা। রীতিমতো মারধর করে জোর করে খুলে নেওয়া হল পোশাক। এমনকি দেওয়া হল স্কুল থেকে বহিষ্কার করার হুমকিও। উত্তরপ্রদেশের হাপুর জেলায় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যেই ঘটেছে এহেন বেনজির কাণ্ড।
আরও শুনুন: ‘রাজ্যে নীচু জাত কোনটি?’ প্রশ্ন খোদ পেরিয়ারের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়েই, ঘনাল বিতর্ক
কিন্তু কেন এহেন অন্যায্য ফরমান জারি করেছিলেন ওই শিক্ষিকারা? ছাত্রীদের অভিভাবকদের অভিযোগ, সেদিন ক্লাসের সব পড়ুয়াদের নিয়ে ছবি তোলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেখানেই দেখা যায়, দুই ছাত্রী স্কুলের পোশাক পরে আসেনি। যোগীরাজ্যের সামাজিক অনুশাসন অনুযায়ী, তারা উচ্চবর্ণের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং দুই দলিত ছাত্রীর পোশাক খুলে নিয়ে তাদের দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন শিক্ষিকারা। প্রতিবাদ জানিয়েও লাভ হয়নি। উলটে ওই দুই দলিত ছাত্রীকে মারধর করে জোর করেই তাদের পোশাক খুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এক ছাত্রীর বাবার দাবি, তফসিলি সম্প্রদায়ের বলেই ওই দুই শিশুর সঙ্গে এহেন আচরণ করা হয়েছে। তবে তারপরেও ওই দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ ছাত্রীদের অভিভাবকদের। অবশেষে ন্যাশনাল কমিশন ফর শিডিউলড কাস্ট-এর তরফ থেকে ঘটনার তদন্ত দাবি করা হয়। তার জেরেই এবার নড়েচড়ে বসেছে উত্তরপ্রদেশের শিক্ষা দপ্তর। ওই দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করারও নির্দেশ দিয়েছেন হাপুর জেলার ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট মেধা রূপম। তা ছাড়া এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দুই শিক্ষিকাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলেও খবর।
আরও শুনুন: নমাজ বিতর্কের জের, সবরকম ধর্মীয় প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞা উত্তরপ্রদেশের ‘বিতর্কিত’ শপিংমলে
স্কুলের মধ্যেও যে শিশুরা নিরাপদ নয়, চোখে আঙুল দিয়ে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছে একাধিক ঘটনা। চূড়ান্ত শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন হেনস্তার মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাও বিরল নয় সেই তালিকায়। কিন্তু সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে ঘটে যাওয়া এই ঘটনাটি কেবল হেনস্তার ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বহুদিন ধরে জমে ওঠা বৈষম্যের ধারণা। যা কোনও শিশুকেও রেহাই দেয় না। সমাজের সেই অন্ধকার দিকটিকেই ফের সামনে এনে দিল উত্তরপ্রদেশের এই ঘটনা।