অনলাইনে আনা কেক খেয়ে জন্মদিনেই মৃত্যু খুদের। পাঞ্জাবের ঘটনায় হতবাক গোটা দেশের মানুষ। নেটদুনিয়া ভরছে শোকবার্তায়। তবে এ কি শুধু বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা! নাকি আমাদের দুয়ারে বিপদ! আসুন, একটু ভেবে দেখা যাক।
মাত্র একটা ক্লিকেই বাড়ির দরজায় চলে আসবে পছন্দের খাবার। দিন দিন যা গোটা দেশে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কোনও ঝঞ্ঝাট নেই, লাইনে দাঁড়ানোর হ্যাপা নেই, এমনকী অপেক্ষাও করতে হবে বড়জোর ৩০ মিনিট। এত সুবিধা না নেওয়াটাই বোকামি মনে করেন অনেকে। তবে এই অনলাইনে আনা খাবার খেয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়া এক খুদে যেন চিনিয়ে দিল শঙ্কার জায়গাটা ঠিক কোথায়।
অনেকেই মনে করেন, রেস্তরাঁয় যাওয়ার চেয়ে অনলাইনে খাবার আনিয়ে নেওয়া ভালো। খাবারের স্বাদ তো আর বদলায় না। সুতরাং এত ঝামেলা নিয়ে বাইরে যাওয়ার কি প্রয়োজন! বিশেষ করে লকডাউনের পর থেকে এই অনলাইন ব্যবস্থাই রীতিমতো আপন করে নিয়েছেন অনেকে। অথচ এই অতিরিক্ত সুবিধাই কাল হল পাঞ্জাবের পাটিয়ালা পরিবারের। অনলাইনে আনা জন্মদিনের কেক খেয়েই মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১০ বছরের এক খুদের। জানা গিয়েছে, খাবারের বিষক্রিয়ার কারণেই এই মৃত্যু। একথা শুনে অনেকেই বলবেন, যে দোকান থেকে কেক আনা হয়েছিল সব দোষ তাদের। কিন্তু এখানেই আছে সমস্যার অন্য পরত। ওই দোকান থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খুদে যে কেক খেয়েছিল সেটি তাদের দোকানের নয়। তাহলে এর মধ্যে এমন কিছু রয়েছে, যা সাধারণের নজরের অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে।
প্রশ্ন তোলার মতো ঘটনার কমতি নেই। কিছুদিন আগের ঘটনাই মনে করা যাক। ঘটনাটি গুরুগ্রামের। লখনউ থেকে এই শহরের দূরত্ব ৫০০ কিমি। অ্যাপের কল্যাণে নবাবের শহর থেকে কাবাব অর্ডার করেছিলেন যুবক। স্বাভাবিক ভাবেই তা হাতে পাওয়ার জন্য বেশ কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে বলেই জানতেন তিনি। কিন্তু না! বাস্তবে তেমনটা হয়নি। মাত্র ৩০ মিনিটেই লখনউ থেকে গুরুগ্রামে পৌঁছে গিয়েছিল খাবার। অ্যাপের হিসাব অন্তত তেমনই বলেছিল। আর এই দাবি মানতে না পেরেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই যুবক। গুরুগ্রামে বসে মাত্র ৩০ মিনিটে লখনউ এর কাবাব তিনি কীভাবে পেলেন, এই নিয়েই প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেইসঙ্গে তোলেন অদ্ভুত এক দাবিও। যুবকের মনে হয়েছিল, তাঁর শহরের কোনও জায়গা থেকেই ওই খাবার এনে লখনউ-এর নামে চালানো হয়েছে। বিতর্কের জল গড়িয়েছিল বহুদূর। সম্প্রতি পাঞ্জাবের খুদের মৃত্যুও যেন নতুন করে সেই বিতর্ক উসকে দিয়েছে!
প্রশ্ন হচ্ছে, সতর্ক থাকবেন কীভাবে? উত্তরটা যে খুব স্পষ্ট, তা নয়। এমনিতে খাবার ডেলিভারি অ্যাপে খুব ভালোভাবে দেখানো হয় কোন রেস্তরাঁ থেকে খাবার আসছে। সেই দোকানের সব তথ্যও দেওয়া থাকে। এমনকি ফোন নম্বরও থাকে। একইসঙ্গে কখন খাবার নেওয়া হচ্ছে তাও দেখানো হয়। এইবার, যখনই দেখা যাবে যে খাবার ডেলিভারি বয় নিয়েছেন, তারপরই ওই রেস্তরাঁয় ফোন করে যাচাই করে নেওয়া যায়। প্রয়োজনে ডেলিভারি যিনি করছেন তাঁর সঙ্গেও কথা বলে ব্যাপারটা বুঝে নেওয়া যেতে পারে। যেহেতু রেস্তরাঁয় ফোন করে যাচাই করা হচ্ছে, তাই পরবর্তীকালে রেস্তরাঁও অস্বীকার করতে পারবে না, যে ওই খাবার তাঁদের দোকানের নয়। এবার যখন বাড়িতে খাবার দেওয়া হচ্ছে তখন মিলিয়ে নিতে হবে, নির্দিষ্ট রেস্তরাঁর প্যাকেটেই খাবার দেওয়া হয়েছে কি না। এত কিছুর পরেও খাবারের প্যাকেট বদল হয়ে যেতেই পারে। সেক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে বইকি!
তবে, সবথেকে বড় কথা বোধহয় চোখ বুজে কোনও কিছুকে ভরসা করার অভ্যাস পালটানো। বিশেষত ছোটদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তা যে ঠিকঠাক, বড়দেরই তা যাচাই করে নিতে হবে। প্রয়োজন হলে, ভালো দোকান থেকে গিয়ে খাবার কিনে আনাই শ্রেয়। আর বাড়িতে যদি খাবার তৈরি করা যায়, তার থেকে ভালো আর তো কিছুই হয় না। অনলাইনে সব খাবারই যে খারাপ এমনটা ভবার কোনও কারণ নেই। সব ডেলিভারির ক্ষেত্রেই যে বিপদের আশঙ্কা আছে, তাও নয়। তবু সতর্ক থাকতে ক্ষতি কী!