দেশ জুড়ে অশান্তির আবহ। হিন্দুত্ব-বিতর্কে তোলপাড় দেশ। না, একে অপরের দিকে আঙুল তোলা নয়। বরং এই পরিস্থিতিতে আত্মসমীক্ষারই পরামর্শ দিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রধান মোহন ভাগবত। ঠিক কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
হয় ধর্মীয় বিদ্বেষ নয় জাতি বিদ্বেষ, নয় তো শ্রেণি বিভাজন। এ দেশে বিভেদজনিত অশান্তি যেন লেগেই রয়েছে। কখনও কারওর বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ। কখনও বা সিনেমার পোস্টার ঘিরে দানা বাঁধছে অশান্তি। গোটা দেশ জুড়েই যেন স্পষ্ট একরকমের অসহিষ্ণুতার ছাপ। আর এই বিভাজনের নেপথ্যের সমস্যাগুলির দিকেই এবার আলো ফেলতে চাইলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। সম্প্রতি কর্ণাটকে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন সরসঙ্ঘচালক। সেখানে দলিত এবং অনগ্রসর শ্রেণির ২১ জন ধর্মগুরুর সঙ্গে একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন সমস্যার আসল শিকড়গুলিকে।
আরও শুনুন: পঁচিশ বছরের আত্মীয়তা, হিন্দু কর্মচারীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম পরিবারই
সরসঙ্ঘচালকের মতে, এই সমস্যার সমাধান এত সহজে সম্ভব নয়। অস্পৃশ্যতা, সংহতিহীনতা, অসাম্যের কথা কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে লেখা নেই। বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তা গভীর ভাবে প্রোথিত হয়ে রয়েছে আমাদের মনে। ফলে এসবকে মন থেকে তাড়াতে সময় লাগবে। আর তার জন্য দরকার ধৈর্য এবং সাহসের। ইদানীং নানা প্রসঙ্গে উঠে আসে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’-এর ধারণা। এ ব্যাপারে মোহন ভাগবতের মত, হিন্দু রাষ্ট্র বা হিন্দু সমাজের কর্তব্য গোটা সমাজের প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি শ্রেণির মধ্যে ভারসাম্য রাখা। আর তা তখনই সম্ভব হবে, যখন ভেদাভেদ মুছে সমস্ত শ্রেণি পরস্পরের মুখোমুখি হবে, আলোচনায় বসবে। কথোপকথনের মাধ্যমেই ভেদাভেদ দূর করা সম্ভব বলেই বিশ্বাস তাঁর। তাঁর আর সেই ‘সমরাস্তা’ পন্থাতেই বিশ্বাস করে আরএসএস। তাঁর মতে দলিত ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির ধর্মীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এমন আলোচনা আরও ঘনঘন হওয়া প্রয়োজন। দলিত বা পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পাশে সঙ্ঘ সবসময় রয়েছে বলেও জানিয়ে দেন মোহন ভাগবত। তাঁর কথায়, হয়তো সময় লাগবে, তবে এই বিভেদ একদিন ঘুচবে বলেই বিশ্বাস তাঁর।
আরও শুনুন: বিদ্বেষ আবহে রাজস্থানে বিপর্যস্ত পর্যটন, প্রভাব পড়েছে ইদের বাজারেও
ভারতকে স্বমহিম রাখতে হলে সেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি বলেই মনে করেন সঙ্ঘচালক। আর সেই স্বতন্ত্রতা ধর্ম, খাদ্যাভ্যাস থেকে অভিরুচি সব কিছুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পাশাপাশি ধর্মান্তরীকরণের মতো বিষয়কে আটকানো অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তিনি। সঙ্ঘের সঙ্গে এই বৈঠককে অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই মনে করছে দলিত ও অনগ্রসর সম্প্রদায়। যেভাবে রাষ্ট্র জুড়ে ক্রমশ চওড়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের ছায়া, সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে সরসঙ্ঘচালকের এই কথাবার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যমূলক বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।