এর আগে নারীর ক্ষমতায়ন ও মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনাই হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাষণে যে চার ‘জাতি’র কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছিলেন নারীদের। তবে শুধু কথার কথা নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলে থাকেন, মহিলাদের উন্নতিপ্রকল্পে ইতিবাচক পদক্ষেপই করে চলেছে মোদি সরকার। তিন তালাক রদ থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপে নারী ক্ষমতায়নের ভিত মজবুত করেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
নারী ক্ষমতায়নের জন্য অনেক কিছুই করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই শংসাপত্র তাঁকে দিলেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশির বোন শাইনা সুনসারা (Shyna Sunsara)। সম্প্রতি গুজরাটের বদোদরায় যে রোড শো করেন মোদি, সেখানেই উপস্থিত ছিলেন কর্নেল কুরেশির বোন। আর তারপরই নারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাজের ঢালাও প্রশংসা করেন শাইনা।
গুজরাটের উন্নয়নের খাতিরেই প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচির অন্যতম অংশ ছিল রোড শো। তবে, সাধারণ রোড শো থেকে তা অনেকটাই আলাদা। কেননা পহেলগাঁও সন্ত্রাস হামলার পর পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দেওয়ার পর এই প্রথমবার গুজরাটে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলত অপারেশন সিঁদুর-এর প্রভাব এই রোড শো-তে ছিল স্পষ্ট। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে যাঁরা এসেছিলেন, তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই হাতে ছিল দেশের জাতীয় পতাকা। অপারেশন সিঁদুর-এর সূত্রেই এদিন প্রধানমন্ত্রীর এই রোড শো-তে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল কুরেশির পরিবারের সদস্যরাও।
বিগত এক মাসে ভারতীয় মননে যেন একাত্ম হয়ে গিয়েছে অপারেশন সিঁদুর আর কর্নেল সোফিয়া কুরেশির নাম। পাকিস্তানের সন্ত্রাসহামলার জবাবে ভারতের প্রত্যাঘাতের পরের সকালেই যে সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানেই দেখা যায় কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে। বলা যায়, দেশের সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে পরিচিত হন এই বৈঠকের সূত্রেই। এর আগে, রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনীর হয়ে বহু কাজে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। তবে, দেশের সেনাবাহিনী তাঁর কৃতিত্বের সঙ্গে পরিচিত হলেও, দেশের মানুষ সেভাবে তাঁকে চিনতেন না। এই বৈঠক শুধু তাঁকে চেনাল তাই-ই না, ধর্ম বেছে পহেলগাঁও হত্যা দেশের ভিতর যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলেছিল, তাও এক লহমায় মুছে যায় কর্নেল কুরেশির উপস্থিতিতে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার বার্তা হয়ে ওঠেন স্বয়ং কর্নেল কুরেশি।
তার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ‘ট্রেন্ডিং’ হয়ে যায় তাঁর নাম। আলোচনায় উঠে আসে তাঁর বোনের প্রসঙ্গও। জানা যায়, কর্নেল কুরেশির বোন শাইনা সুনসারা নিজে একজন জাতীয়-স্তরের রাইফেল শ্যুটার। এর জন্য ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদকে ভূষিত করেন তাঁকে। আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই শাইনা যখন নিজের মুখে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন, তখন তা অন্য গুরুত্ব বহন করে।
ইতিমধ্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ কিংবা কর্নেল কুরেশিকে নিয়ে যে ঠিক কত কথা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তার অন্ত নেই। তার সবটাই যে প্রশংসাসূচক, এমনটা বলা যায় না। কিছুদিন আগে যেমন এ প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য করে রীতিমত রোষের মুখে পড়েন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহ। সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষদের চিহ্নিত করতে গিয়ে সোফিয়া কুরেশির সঙ্গে তিনি এক আসনে বসান পাকিস্তানিদের। তবে তাতে কর্নেল কুরেশির গরিমা কিছুমাত্র কম হয় না। বরং বিজয় শাহের মন্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া জনরোষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, ইতিমধ্যেই জনমানসে তাঁর অবস্থান পাকা করে নিয়েছেন কর্নেল কুরেশি। এইবার শাইনা সুনসারার (Shyna Sunsara) মন্তব্যটি তাতে শিলমোহর লাগিয়ে দেয়। তিনি এ কথাও বলেন যে, সোফিয়া কুরেশি এখন আর কেবল তাঁর একার বোন নয়, বরং ‘দেশের বোন’ হয়ে উঠেছেন। এ বক্তব্যের প্রতিফলন শোনা যায় তাঁদের বাবা তাজ মহম্মদের কথাতেও।
পাশাপাশি, মোদি সরকারের নারী ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানান শাইনা। বলেন, বর্তমানে একজন নারী হিসেবে আগের চাইতে অনেক বেশি নিরাপদ অনুভব করেন তিনি। এর আগে নারীর ক্ষমতায়ন ও মোদি সরকারের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনাই হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নিজের ভাষণে যে চার ‘জাতি’র কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছিলেন নারীদের। তবে শুধু কথার কথা নয়। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলে থাকেন, মহিলাদের উন্নতিপ্রকল্পে ইতিবাচক পদক্ষেপই করে চলেছে মোদি সরকার। তিন তালাক রদ থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপে নারী ক্ষমতায়নের ভিত মজবুত করেছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। যদিও এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর আছে। কেননা বিরোধীদের দাবি, নারী ক্ষমতায়নের থেকেও ভোটমুখী রাজনীতিই লক্ষ্য সরকারে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতির কারণে অন্যান্য স্বাধীনতার মতো নারী স্বাধীনতাও যে আহত হচ্ছে, এ বিষয়েও সমালোচনার স্বর তীব্র হয়েছে মোদির আমলেই। তবে সেই মতবিরোধ সরিয়ে রাখলেও, নারীর উন্নতিপ্রকল্পে কেন্দ্র যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছে তা অস্বীকার করা যায় না। কর্নেল কুরেশির বোনের মন্তব্য সেই অভিমুখেই। নিরাপত্তার কথাটি তো তিনি উল্লেখ করেই দিয়েছেন।
অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor)-এর পর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং-এর উপস্থিতি দেশের সেনাতে নারীর গুরুত্বের কথাই আলাদা করে মনে করিয়ে দেয়। তবে, তা শুধু সেনা নয়, সামগ্রিক ভাবে দেশের নারীশক্তিকেই উদযাপন করে। কর্নেল কুরেশির বোনের মন্তব্য যেন তা আরও স্পষ্ট করল।