বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের তকমা দেওয়া যায় কিনা এ নিয়ে সম্প্রতি ফের উঠেছে বিতর্ক। সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দিল্লি হাই কোর্ট। এরই মধ্যেই আবার অন্য প্রশ্ন তুলে দিল কেরলের হাই কোর্ট। বৈবাহিক ধর্ষণ বা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের মতো অভিযোগের ক্ষেত্রে লিঙ্গসাম্যকে কতটা মর্যাদা দেয় এ দেশের আইন? এই প্রসঙ্গে কী বললেন বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে? শুনে নিন।
বৈবাহিক সম্পর্কে অসম্মতিক্রমে যৌনসম্পর্ক স্থাপন মানেই কি তা ধর্ষণ? সম্প্রতি এই প্রশ্নেই দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল দিল্লি হাই কোর্ট। বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধের তকমা দেওয়া হোক, দীর্ঘদিন ধরেই উঠেছে এই দাবি। তেমনই একটি মামলার রায়দানে একমত হতে পারেনি দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই মামলা তাই সম্ভবত পৌঁছবে সুপ্রিম কোর্টে।
এই বিতর্কের মধ্যেই এবার নয়া বিতর্ক সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিল কেরলের হাই কোর্ট। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস আইনের চোখে অপরাধ হিসেবেই ধার্য হয়। তবে এই আইন কি শুধুই একজন পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? নারীরা কি আদৌ সেই আইনের আওতায় পড়েন? এবার এমনই প্রশ্ন তুলে দিলেন কেরল হাইকোর্টের বিচারপতি এ মহম্মদ মুস্তাক। তাঁর মতে, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ নম্বর ধারা আদৌ লিঙ্গনিরপেক্ষ নয়। কারণ ওই আইনের আওতায় একজন পুরুষের যা সাজা হয়, একজন মহিলার জন্য সেই শাস্তি ধার্য করা হয় না। এমনটাই পর্যবেক্ষণ আদালতের। এমনকী বৈবাহিক ধর্ষণের মামলাতেও এই অসাম্য রয়েছে বলেই মনে করছেন তিনি।
আরও শুনুন: ঈশ্বরের হয়ে আইনি লড়াই লড়বেন কে? আদালতের জবাব, ‘ভগবানের বন্ধু’ ভক্তরাই
না, কোনও গার্হস্থ্য হিংসা বা ধর্ষণের মামলা নয়। বরং বিবাহবিচ্ছিন্ন এক দম্পতির সন্তানের হেফাজত নিয়ে একটি মামলার শুনানিতেই উঠেছে এই প্রশ্ন। উক্ত মামলায় আবেদনকারীর আইনজীবী দাবি করেন, মহিলার স্বামী এককালে একটি ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তবে অভিযুক্তর আইনজীবীর দাবি, সেই মামলা থেকে ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন তিনি। তাছাড়া সেই মামলাটি সরাসরি ধর্ষণের নয়, বরং তা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের। আর সে বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়েই নিজের এই পর্যবেক্ষণ জানান বিচারপতি।
এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার ওই আইনের লিঙ্গনিরপেক্ষতা নিয়ে সরব হয়েছেন বিচারপতি মুস্তাক। গত এপ্রিলেই অন্য একটি মামলায় বিচারপতি মুস্তাক ও বিচারপতি কৌসের এদাপ্পাগাথের বেঞ্চ জানায়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস তখনই ধর্ষণ বলে ধার্য হবে, যেখানে মহিলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার খর্ব হবে। অর্থাৎ সেই সহবাসে যদি মহিলার সম্মতি না থাকে, তা ধর্ষণ বলেই গণ্য হবে। সেই মামলায় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবনের শাস্তি ধার্য করেছিল হাইকোর্ট। পাশাপাশি সেই মামলায় বিচারপতিদের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, শুধুমাত্র বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একত্রে বাস করলেই তা ধর্ষণ না-ও হতে পারে। অভিযোগকারিনীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক থাকার পর অভিযুক্ত যদি অন্য কাউকে বিয়ে করেন, সেক্ষেত্রে ধর্ষণের অভিযোগ খাটবে না বলেই মত বিচারপতি মুস্তাকের।
আরও শুনুন: মাতৃত্বকালীন ছুটি না মেলায় অভিযোগ হাই কোর্টে, মামলা তিন মাসের শিশুর
সন্তান হেফাজতের মামলার শুনানিতে এই ব্যাপারটি নিয়ে ফের সরব হন বিচারপতি মুস্তাক। জানান, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ব্যপারে নারী ও পুরুষকে সমদৃষ্টিতে দেখে না আদালত। সেক্ষেত্রে অভিযুক্ত মহিলাকে আদৌ ধর্ষণের শাস্তি দেওয়া হয় না। বিচারপতি মুস্তাকের মতে, সমাজ এবং আইনে এমন একটি স্টিরিওটাইপ ধারণা তৈরি হয়ে রয়েছে, যেখানে এমনটা ধরেই নেওয়া হয় পুরুষই সর্বদা নারীর উপর কর্তৃত্ব খাটাতে অভ্যস্ত। উল্টোটা কোনও ভাবেই হতে পারে না। আর সে জন্যই ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ৩৭৬ নম্বর ধারাটি লিঙ্গনিরপেক্ষ নয় বলে মনে করছেন বিচারপতি মুস্তাক। তবে তাঁর এই পর্যবেক্ষণ এখনই আইনে বদল আনবে কেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।