ঠান্ডা, শান্তশিষ্ট মেয়েটার মধ্যেও যে লুকিয়ে রয়েছে এক ডাকাবুকো বীরপুরুষ, তা কে-ই বা জানত! তবে বিপদে পড়ে সাহসীকতায় ফুল মার্কস পেয়ে দেখিয়েছেন কলেজের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী। রাতবিরেতে ছুরি, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়েছিল একদল দুষ্কৃতী। তবে উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসে ভর করে চোরেদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন তিনি। শুধু যে চুরিই আটকেছেন তা নয়, আততায়ীদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন বোনকেও। শুনুন, এক সাধারণ মেয়ের অসাধারণ সাহসের গল্প।
“রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা
এমন কেন সত্যি হয় না আহা
ঠিক যেন এক গল্প হত তবে
শুনত যারা অবাক হত সবে।”
– রবিঠাকুরের সেই ‘বীরপুরুষ’ কবিতাটা মনে আছে নিশ্চয়ই? তবে শুধু কবিতাতেই নয়। তেমন কয়েক জন বীরপুরুষ ছড়িয়ে রয়েছেন আমাদের আশেপাশে। হয়তো বা আমাদের মধ্যেই। তেমন বিপদআপদে নিপাট সাধারণ লোকেদের মধ্যে থেকেই বেরিয়ে আসেন তাঁরা। যেমন ধরুন এই মেয়েটির কথাই। সবে কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া রিয়া। শান্তশিষ্ট মেয়েটির মধ্যে যে এমন একজন ডাকাবুকো সাহসী লুকিয়ে রয়েছে, তা কি নিজেই জানতেন রিয়া!
তবে সাহসের পরীক্ষায় ফুল মার্কস নিয়ে পাশ করেছেন রিয়া। নিজে তো বেঁচেইছেন, বাঁচিয়েছেন বোনকেও। কী হয়েছিল আসল ঘটনাটা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
আরও শুনুন: ‘দেশের জন্য প্রাণও দিতে পারি’, বিজেপি কর্মীদের হামলার জবাব কেজরিওয়ালের
গুজরাটের সুরাটের চালথান এলাকার বাসিন্দা রিয়া সাইন। সামনেই পরীক্ষা। রাতের দিকে পড়াশোনা করার অভ্যাস রিয়ার। সেদিনও অনেক রাত অবধি জেগে ছিলেন তিনি। তার মধ্যে সেদিন পাড়ায় ইলেকট্রিক ছিল না। রাত তখন দেড়টা হবে। হঠাৎ করেই কিসের একটা যেন শব্দ পান রিয়া। প্রথমে ব্যাপারটায় তেমন পাত্তা দেননি। কী মনে হতে উঠে দেখার চেষ্টা করতেই চমকে ওঠেন। একি! কারা যেন সব ঢুকে পড়েছে ঘরের মধ্যে। হাতে ছুরি। কিছু বোঝার আগেই একটা লোক বিছানায় উঠে এসে গলার কাছে ছুরি উঁচিয়ে ধরল। টু শব্দ করলেই প্রাণে মেরে দেব! সশস্ত্র আততায়ীর হুমকি শুনে কম ভয় পাননি রিয়া। একে রাতের অন্ধকার। তার উপর পাশে ঘুমন্ত বোন। আততায়ীরা সংখ্যায় এক না একাধিক, অন্ধকারে তা-ও ঠিক করে ঠাহর করা যাচ্ছে না। তবে সাহস হারাননি। ইতিমধ্যেই রিয়া খেয়াল করেন, আরও দুজন দুষ্কৃতিও ঢুকে পড়েছে ঘরে, এবং তারা ঘুমন্ত বোনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আরও শুনুন: করোনা থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ, ভারতীয়দের উদ্ধারে বারবার বিমান উড়িয়েছেন এই বঙ্গতনয়া
কোথা থেকে যেন বীরপুরুষ জেগে ওঠে রিয়ার মধ্যে। ততক্ষণে ছুরি উঁচিয়ে থাকা লোকটিও বোধহয় একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। একধাক্কায় তাকে সরিয়ে বোনকে নিজের কাছে টেনে আনার চেষ্টা করেন রিয়া। ততক্ষণে বোনেরও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। আততায়ীর ছুরিতে হাতের বেশ খানিকটা অংশ কেটেও যায় তাঁর। আতঙ্কে, যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন। শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তাঁদের মা-সহ পরিবারের অন্য লোকেদের।
বাড়ির সকলে জেগে গিয়েছে বুঝতে পেরেই চুরির পরিকল্পনা মুলতুবি রেখে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। একটি মোবাইল খোয়া গেলেও বাড়ির বাকি সমস্ত দামী জিনিসপত্রই সুরক্ষিত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার এফআইআর দাখিল করতেই ১৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাগিয়ে ফেলে পুলিশ। যদিও ওই এলাকার পুলিশ ইনস্পেক্টরের দাবি, দুষ্কৃতীদের ধরতে ইতিমধ্যেই তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ।
হাতে বেশ কয়েকটি সেলাই পড়েছে রিয়ার। তবে সেদিন রাতে রিয়া যে সাহস দেখিয়েছেন, যেভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে বিপদের মোকাবিলা করেছেন, তাতে অবাক পরিবারের লোকেরা। রিয়ার বীরত্বের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। অমন সাহসের জন্য রিয়াকে কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁরাও।