হিজাব বিতর্কে নয়া মোড়। পোশাকের অধিকারের মধ্যে কি পোশাক খোলার অধিকারও পড়তে পারে? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। দিন কয়েক ধরেই হিজাব বিতর্কে উত্তাল দেশ। কর্ণাটক হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ মামলাকারী। সেই মামলার শুনানিতে কী বলল শীর্ষ আদালত? শুনে নিন।
হিজাব মামলায় বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিল শীর্ষ আদালত। হিজাব পরা মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল নানা মহল। ঠিক সেইখানেই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। পোশাকের অধিকারের মধ্যে কি পোশাক খোলার অধিকারও পড়তে পারে? সেক্ষেত্রে ব্যাপারটা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য। মামলাকারীর আইনজীবীর সামনে এমন সওয়ালই রাখল সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।
আরও শুনুন: ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনাদের মাথাব্যথা কেন?’ খোলামেলা পোশাকেই ট্রোলের সপাট জবাব উরফির
কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি কলেজে হিজাব পরে আসা পড়ুয়াদের ক্লাস করতে বাঁধা দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেই থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। সেই মামলার জল গড়ায় হাইকোর্ট ছাড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা মুসলিম মহিলাদের জন্য অপরিহার্য নয়, এবং তা মৌলিক অধিকারের মধ্যেও পড়ে না। এমনটাই জানিয়ে দিয়েছিল কর্ণাটক হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এক মামলাকারী। ওই মামলার দ্রুত শুনানির আরজি জানানো হলেও, তাতে সম্মত হয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তবে ওই মামলার শুনানির জন্য গঠন করা হয় পৃথক বেঞ্চ। সেই মামলা নিষ্পত্তি হওয়া না পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় কর্ণাটক হাইকোর্ট।
বুধবার সেই সংক্রান্ত মামলারই শুনানি ছিল বিচারপতি হেমন্ত গুপ্তা ও বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চে। সেখানেই মামলাকারীর আইনজীবী দেবদত্ত কামাতের সামনে বড়সড় প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন বিচারপতি গুপ্তা। তাঁর বক্তব্য, পোশাকের অধিকারের মধ্যে কি পোশাক খোলার অধিকারও সংযুক্ত হবে? সেই প্রশ্নের উত্তরে দেবদত্ত জানান,স্কুলে সাধারণত কেউ পোশাক খোলে না। সেক্ষেত্রে রুদ্রাক্ষ বা ক্রস পরা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে বলেই জানান কামাত। অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুদ্রাক্ষের মালা বা ক্রস পরে আসেন। এর উত্তরে বিচারপতি গুপ্তার মন্তব্য, রুদ্রাক্ষ বা ক্রিস পরা হয়ে পোশাকের ভিতরে। তা বাইরে থেকে দেখা যায়না। একই সঙ্গে বিতর্ককে অযৌক্তিক জায়গায় টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার জন্য় আইনজীবী কামাতকে মৃদু ভর্ৎসনাও করেন বিচারপতিরা।
আরও শুনুন: ইসলামি ছোঁয়ায় আপত্তি! যোগীরাজ্যের ওয়ার্ডে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামও বাতিলের সুপারিশ
এর পরে দুই বিচারপতিই জানান, ধর্মীয় রীতি মেনা চলা বা হিজাব পরার অধিকার নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। তবে এ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পোশাকবিধি এর ফলে কোথাও লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা। কারণ স্কুলের পোশাকবিধি একটি সংবিধানসম্মত এবং গ্রহণযোগ্য বিষয়। এটা নিয়ে কোনও পক্ষেরই কোনও আপত্তি থাকতে পারেনা বলেই জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
সব মিলিয়ে হিজাব মামলাটিকেই নয়া প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বিচারপতিরা। এই মামলার জল এবার কোনদিকে গড়ায়, সেটাই এখন দেখার।