মন্দিরে ঢুকতে গেলে ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হয় পুরুষদের। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই প্রথা। আধুনিক সময়েও যেন এর ব্যতিক্রম নেই। এবার সেই প্রথারই অবসান চাইলেন কেরলের শিবগিরি মঠের প্রধান। এবার সেই প্রথারই অবসান চাইলেন কেরলের শিবগিরি মঠের প্রধান। আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মন্দিরে ঢুকতে গেলে ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত রাখতে হয় পুরুষদের। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই প্রথা। আধুনিক সময়েও যেন এর ব্যতিক্রম নেই। এবার সেই প্রথারই অবসান চাইলেন কেরলের শিবগিরি মঠের প্রধান। তাঁর বক্তব্য, এই প্রথা অনর্থক। আজকের দিনে তা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। তাঁর এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও।
মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে মহিলাদের অনেক নিয়মকানুন পালন করতে হয়। এক একটি মন্দিরের ক্ষেত্রে আছে নির্দিষ্ট পোশাকবিধিও। যা একরকম সামাজিক ট্যাবুই। তা নিয়ে বারবার আলোচনাও হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, একই ক্ষেত্রে যখন পুরুষদের নিয়ম পালন করতে হয় না, তখন মহিলাদেরই বা তা করতে হবে কেন! প্রসঙ্গ আলাদা হলেও, নিশ্চিতই তা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে দেখা যাচ্ছে, শুধু মহিলাদের নয়, পোশাকবিধি মানতে হয় পুরুষদেরও। আর সে বিধিই হল ঊর্ধাঙ্গের পোশাক না-থাকা। তার নেপথ্যের কারণটি যেমন প্রাচীন, তেমনই বর্ণবাদী। এই প্রথার প্রচলন হয়েছিল, যাতে পুরুষদের পইতা দেখা যায়, তার জন্য। মন্দিরে কারা প্রবেশ করতে পারবেন আর কারা পারবেন না, তা খুব সহজেই এই নিয়মের আওতায় পরখ করে নেওয়া যেত। জাতভেদের যে প্রাচীন প্রকল্প আমাদের দেশে, তারই একটি নমুনা হয়ে যেন জন্ম নিয়েছিল এই প্রথা। যা এখনও বলবৎ। কিন্তু সম্প্রতি শিবগিরি মঠের প্রেসিডেন্ট স্বামী সচ্চিদানন্দ এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাঁর স্পষ্ট অভিমত যে, এই প্রথার অবসান হওয়া একান্ত জরুরি। কেননা যে কারণে এই প্রথার জন্ম তা তামাদি হয়ে গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, এক ঈশ্বর, এক ধর্ম, এক জাতি এই মূলমন্ত্রেই তাঁরা বিশ্বাস করেন। তাহলে সেখানে এই সূক্ষ্ম ভেদের প্রথা আজও চালু থাকবে কেন! তাঁর তাই সাফ কথা এই প্রথা এক ধরনের কু-অভ্যাস। তা বর্জন করাই শ্রেয়।
তাঁর এই বক্তব্যকে পুরোপুরি সমর্থন করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, স্বামীজি যে উদার আর আধুনিক বার্তাটি দিয়েছেন, তা এই সময়ের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এই বার্তা সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলেই তাঁর অভিমত। তাঁর আশা, যদি অন্যান্য মন্দির কর্তৃপক্ষও এই উদার দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেয়, তাহলে সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। তা কাম্য বলেই জানিয়েছেন তিনি।
নতুন শতকের পঁচিশতম বছরে পা দিলাম আমরা। তবু জাতিভেদ, বর্ণবাদী ব্যবস্থারা যেন ছদ্মবেশেই আমাদের সমাজে রয়ে গিয়েছে। সেই ছিদ্রপথে ঢুকে পড়ে বদ হাওয়া। তাতে সমাজ বিষিয়ে যায়। আর তাই জরুরি সময়ের উপযোগী সংস্কারের। কেরলের শিবগিরি মঠের তরফে যেন সেই সামাজিক পরিবর্তনেরই ডাক দেওয়া হল বছরের গোড়ায়।