মাত্র মাস কয়েকের দাম্পত্য। আচমকা শত্রুর বুলেট এসে কেড়ে নিয়েছিল স্বামীকে। কিন্তু তাতে দমে যাননি শহিদ দীপক সিং-এর স্ত্রী রেখা সিং। বরং স্বামীর পথই অনুসরণ করেছেন তিনি। শিক্ষকতার পেশা ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় সেনাতে। আসুন শুনে নিই এই অসমসাহসিনীর কীর্তি।
শিক্ষকতা ছেড়ে ভারতীয় সেনাতে যোগদান। এই স্বপ্ন কয়েক বছর আগেও দেখতেন না রেখা সিং। কিন্তু আচমকাই জীবনটা বদলে গিয়েছিল। আর তারপর থেকে এই লক্ষ্যপূরণকেই জীবনপণ করেছিলেন তিনি। এখন স্বপ্ন সফল হয়েছে। শিক্ষকতা অতীত, ভারতীয় সেনাতেই যোগ দিয়েছেন রেখা সিং।
আরও শুনুন: এলন মাস্ক বা আম্বানির নাম শোনা, কিন্তু বিশ্বের প্রথম কোটিপতি ব্যক্তিকে কি চেনেন?
তবে এই যোগদানের নেপথ্যের কাহিনি করুণ। রেখার স্বামী ছিলেন ল্যান্স নায়েক দীপক সিং। বিয়ের পর অল্পদিনই একসঙ্গে কাটিয়েছিলেন তাঁরা। বলতে গেলে দাম্পত্য জীবন মাত্র ১৫ মাসের। তারপরই এল দুঃসংবাদ। ২০২০ সালের ১৫ জুন। খবর এল, গালোয়ানে লাল ফৌজের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মৃত্যু হয়েছে দীপকের। শহিদ হলেন রেখার স্বামী। আর সেই ঘটনাই যেন জন্ম দিল নতুন রেখার। যুদ্ধে স্বামী শহিদ হয়েছেন, কিন্তু তাই বলে দেশসেবা থেকে সরে আসতে চাননি রেখা। বরং শহিদ স্বামীর স্বপ্নপূরণকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য করে তোলেন। দীপক সিং নেই তো কী হয়েছে, তিনি তো আছেন। তিনিই দেশের হয়ে অস্ত্র ধরবেন, রুখে দাঁড়াবেন শত্রুর বিরুদ্ধে। মনে মনে নিজেকে তৈরি করেন রেখা। ব্যক্তিগত ক্ষতি যেন তাঁর অন্তরে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলে নতুন করে। সিদ্ধান্ত নেন, শিক্ষকতার চাকরি আর করবেন না। বরং যোগ দেবেন ভারতীয় সেনাতে।
আরও শুনুন: ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিংসার পথ প্রশস্ত হচ্ছে’, জ্ঞানবাপী সমীক্ষা নিয়ে বিস্ফোরক আসাদউদ্দিন
তবে ভাবনা আর বাস্তব সবসময় যে হাত ধরাধরি করে হাঁটে তা তো নয়। সেনায় যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেই যোগ দেওয়া যায় না। তার জন্য চাই পরিশ্রম। মানসিক দৃঢ়তা এবং শারীরিক সক্ষমতা- দুইই প্রয়োজন। শহিদ স্বামীকে স্মরণ করেই সেই লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন রেখা। অবশ্য প্রথমবার ব্যর্থতাই এসেছিল। তা-ও হাল ছাড়েননি রেখা। নতুন উদ্যমে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন। শেষমেশ অবশ্য নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সফল হন। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ভারতীয় সেনায় যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করেছেন রেখা। আগামী ২৮ মে থেকে চেন্নাইয়ে শুরু হবে তাঁর প্রশিক্ষণ।
স্বামীকে হারানোর দুঃখ ব্যক্তিগত। কিন্তু সেই দুঃখকে যেভাবে দেশপ্রেমে রূপান্তরিত করেছেন রেখা, যেভাবে ভারতীয় সেনায় যোগদানের জন্য পরিশ্রম করেছেন, তা গোটা দেশের কাছেই যেন অনুপ্রেরণার কাহিনি। ব্যক্তিগত শোককে এভাবে দেশের কাজে যিনি লাগাতে পারেন, তাঁকেই তো কুর্নিশ করে গোটা দেশ।