ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই দাবিতে কোমর বেঁধে নেমেছিলেন রাজ ঠাকরে। পালটা রাজের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল শিব সেনা। সেই প্রেক্ষিতেই এবার শিব সেনার বিরুদ্ধে আদর্শচ্যূত হওয়ার অভিযোগ আনলেন রাজ। তাঁর হাতিয়ার শিব সেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের পুরনো একটি ভিডিও। তা সামনে এনেই এবার রাজের তোপ উদ্ধবকে।
মহারাষ্ট্রের রাজনীতি যেন আবর্তিত হচ্ছে এক জটিল প্রশ্নে। ‘হিন্দুত্বে বড় কে?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই ব্যস্ত এমএনএস, বিজেপি এবং শিবসেনা। দিন কয়েক ধরেই সে রাজ্যে চলছে লাউডস্পিকার বিতর্ক। ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেছে রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা। বিশেষত মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার নিয়েই বিশেষ আপত্তি রাজ ঠাকরের। সেই আন্দোলনে পাশে নেই শিবসেনা। বরং উল্টে বিরোধিতার সুরই প্রকট করেছেন শিবসেনা প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। সেই রেষারেষির রেশ পৌঁছেছে উদ্ধবের বাড়ির আঙিনা পর্যন্ত। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ থেকে সরে গিয়েছেন উদ্ধব। এই অভিযোগ এনে তাঁর বাড়ির সামনে হনুমান চালিশা পাঠের হুমকি দেন অমরাবতীর নির্দল সাংসদ নভনীত কৌর রানা ও তাঁর স্বামী বাদনেরার বিধায়ক রবি রানা। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। গ্রেপ্তারও হন নভনীত ও রানা। বেশ কয়েক দিন জেলে কাটানোর পর শেষমেশ জামিন পেয়েছেন দম্পতি। এবার খোদ বাল ঠাকরেকে হাতিয়ার করেই উদ্ধবের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন রাজ।
আরও শুনুন: সাম্প্রদায়িক বিভাজনের সামনে ‘ঝুঁকেগা নেহি’, বৃদ্ধার মনোবল দেখে অবাক মহারাষ্ট্র
সম্প্রতি টুইটারে রাজ পোস্ট করেছেন বাল ঠাকরের পুরনো বক্তৃতার একটি অংশ। যেখানে শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতার মুখে শোনা গিয়েছে হিন্দুত্ববাদী স্বর। শিবসেনা ক্ষমতায় এলে মসজিদে লাউডস্পিকার ব্যবহার থেকে শুরু করে রাস্তায় বসে নমাজ পড়া নিষিদ্ধ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাল ঠাকরে। উদ্ধব ঠাকরে পরিচালিত শিব সেনা যে, আসল আদর্শ থেকে সরে গিয়েছে, তাই সাফ বোঝাতে চেয়েছেন রাজ ঠাকরে।
এদিকে মহারাষ্ট্রে শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করলে রাজ ঠাকরে ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন উদ্ধব। ঔরঙ্গাবাদে রাজ ঠাকরের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান মহারাষ্ট্রের ডিজি রজনীশ শেঠ। তার পরেই ওই ভিডিওটি টুইটারে পোস্ট করেন রাজ ঠাকরে। উদ্ধবের শিবসেনা বাল ঠাকরের আদর্শ থেকে সরে এসছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। রাজের টুইটে পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা শেহজাদ পুনাওয়ালা। তাঁর মত, সোনিয়া গান্ধী ও শরদ পওয়ারের চাপের মুখেই বিরোধিতার পথে গিয়েছেন উদ্ধব। হিন্দুত্ব, বীর সাভারকার এবং রাম মন্দির, এ সব কিছুই ভুলে গিয়েছেন তিনি। আসলে বাল ঠাকরের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ থেকেই বিচ্যুত আজকের শিবসেনা।
আরও শুনুন: মসজিদে আজান শুরু হতেই বন্ধ লাউডস্পিকার, সম্প্রীতির নজির গড়ল বিহারের মন্দির
তবে পিছু হটার পাত্র নন রাজ ঠাকরে। বুধবার মুম্বইয়ের চারকপ এলাকার একটি মসজিদের কাছে লাউডস্পিকারে হনুমান চল্লিশা পাঠ করেন এমএনএস কর্মীরা। এ দিনই রায়গড় জেলায় শ্রী সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে মহা আরতি করারও কথা রয়েছে তাঁদের। গত মঙ্গলবার অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে ওই আরতি অনুষ্ঠান আয়োজন করার কথা ছিল। তবে ইদের জন্য তা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে।
সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক রেষারেষি অন্যমাত্রা নিয়েছে তা বলাই যায়। তবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যে ভাবে মাথা চাড়া দিচ্ছে সাম্প্রদায়িক অশান্তি, তাতে মহারাষ্ট্রেও তেমন কিছু ঘটবে না, এ ব্যাপারে পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না ওয়াকিবহাল মহল। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা কড়া করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।