পুলিশের উর্দিতে থাকবে স্রেফ নামের আদ্যক্ষর। কোনও পদবি নয়। সম্প্রতি এমনই নিয়ম জারি করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ প্রশাসন। দাবি, এমনটা করলেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। ঠিক কী বলা হয়েছে নয়া নির্দেশিকায়? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, নামে কী আসে যায়! বাস্তবে হয়তো তাই। কিন্তু পদবিতে যে অনেক কিছু যায় আসে, তার ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। সাম্প্রতিক সরকারি নির্দেশিকাও সেকথাই মনে করিয়ে দিল। সাধারণ কেউ নয়, নিয়মে বাঁধা পড়েছেন খোদ পুলিশকর্মীরাই। এবার থেকে স্রেফ নামের আদ্যক্ষরই তাঁদের উর্দিতে দেখা যাবে। মুছে ফেলা হবে পদবি।
:আরও শুনুন:
দেবতার জন্ম! পাথরের মূর্তি নয়, মন্দিরে ঠাঁই পেল বিশেষ আকৃতির আলু
এদেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তির ঘটনা নতুন কিছু নয়। আগেও বারবার বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তপ্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত। কড়া পুলিশি পাহারায় কিংবা সেনা মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়েছে। অভিযোগ অবশ্য বিরোধী শিবিরের তরফেই বেশি শোনা যায়। শাসকদল কিছুই কাজ করছে না, এমন একটা ইঙ্গিত থাকে তাতে। এদিকে এমন কোনও ঘটনায় সবথেকে বেশি নাকাল হতে হয় এলাকার প্রশাসনকে। দিনরাত এক করে পাহারায় ব্যস্ত থাকেন স্থানীয় পুলিশ কর্মীরা। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বিড অঞ্চলের ঘটনাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সেখানকার কোনও এক গ্রামের প্রধান খুন হওয়ায় গোটা এলাকা রীতিমতো উত্তপ্ত। বিষয়টা সাম্প্রদায়িক অশান্তির আকার নেয় অল্পদিনে। আর তাতেই প্রশাসনের তরফে এই নজির বিহীন পদক্ষেপ। স্রেফ পাহারা নয়, নয়া নিয়ম মানতে বলা হয়েছে স্থানীয় পুলিশদের। কোনওভাবেই তাঁদের জাতি বা ধর্মপরিচয় সাধারণ কাউকে বুঝতে দেওয়া চলবে না, এমনটাই সাফ জানিয়েছে প্রশাসন। এমনিতে, পুলিশের উর্দিতে পুরো নামই লেখা থাকে। তবে এক্ষেত্রে সেই নিয়মেই বদল আনার নির্দেশিকা জারি হয়েছে। বলা হয়েছে, স্রেফ নামের আদ্যক্ষরটাই যথেষ্ট। তবে কি পুলিশের ধর্ম বুঝলে অশান্তি আরও বাড়বে?
:আরও শুনুন:
শিবের নাম নিলেই আইন-কানুন কি হবে শিবঠাকুরের দেশের মতো?
হয়তো তাই। অন্তত সেখানকার প্রশাসন সেই আশঙ্কাই করেছে। দেশের নাগরিক হিসেবে পুলিশ বা প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অধিকার সকলের রয়েছে। সেখানে ধর্ম পরিচয় আলাদা কোনও গুরুত্ব পায় না। তাই পুলিশ কর্মীদের মধ্যে এমন অনেকেই রয়েছেন, যাদের ধর্ম আলাদা। সংবিধান অনুযায়ী, গায়ে উর্দি থাকলে তাঁদের একটাই পরিচয়। তাঁরা সকলে দেশের সেবায় নিয়োজিত, পুলিশ। কিন্তু অশান্তির আবহে সেকথা সবাই কতটা বুঝবে, তা নিয়ে বেশ চিন্তায় মহারাষ্ট্রের প্রশাসন। তাই কোনও ঝুঁকি না নিয়ে, পুলিশ কর্মীদের পদবি মোছার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, যে দেশে দীর্ঘদিন রাষ্ট্রপতির গুরুদায়িত্ব সামলেছেন আব্দুল কালামের মতো ব্যক্তিত্ব, সে দেশের প্রশাসনকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হচ্ছে। অশান্তি থামানোর ক্ষেত্রে এর আদৌ কোনও প্রভাব রয়েছে কি না, তা তর্কের বিষয়। তবে কারও পদবি নিয়ে অনেক রকমের সমস্যাই যে হতে পারে, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। হোক না পুলিশের উর্দি, আসলে তা গায়ে চাপিয়েছেন একজন রক্তমাংসের মানুষ, আর এই সমাজ তাঁর মনুষ্যত্ব বা কাজের পরিচয়কে প্রাধান্য দিতে নারাজ, একটাই পরিচয় প্রকাশ্যে গণ্য হবে, যেখানে স্পষ্ট হবে তাঁর ধর্ম, তাঁর পদবি!