সন্ত্রাস হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু যে মর্মান্তিক ঘটনা তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এবং ভারত রাষ্ট্রের তরফ থেকে এর যা জবাব দেওয়া উচিত, তা দেওয়াও হয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকার আর সরকারের মদতপুষ্ট জঙ্গিহানাকে এরপর থেকে আর আলাদা করে দেখবে না ভারত। যেভাবে ভারত এতজন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর জবাব দিয়েছে, তার জন্য কুর্নিশই জানিয়েছে দ্বিবেদী পরিবার। তবে, পাশাপাশি সন্তানের জন্য সম্মানও প্রার্থনা করছেন তাঁরা।
পহেলগাঁও সন্ত্রাস হামলা ‘সাধারণ ঘটনা’ নয়। কারণ সেখানে ধর্মপরিচয়ের ভিত্তিতেই হত্যা করা হয়েছিল সাধারণ পর্যটকদের। সন্ত্রাসীদের বন্দুকের সামনে নিজেদের ধর্মপরিচয় গোপন করেননি বলেই প্রাণ হারাতে হয়েছে তাঁদের। ভারত তার সমুচিত জবাব নিশ্চয়ই দিয়েছে। কিন্তু যাঁদের এভাবে প্রাণ হারাতে হল, তাঁরা কি শহিদের মর্যাদা পেতে পারেন না? ঠিক এই প্রশ্নই তুললেন পহেলগাঁও হত্যায় নিহত শুভম দ্বিবেদীর (Shubham Dwivedi) পরিবার।
কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়ার মাত্র মাস দুই আগেই বিয়ে হয়েছিল শুভম দ্বিবেদীর। হত্যার দিন স্ত্রী আশান্যা দ্বিবেদী পাশেই ছিলেন, চোখের সামনে স্বামীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেছেন তিনি। পরে জানা যায়, প্রথম গুলিটাই চলেছিল শুভমের উপর। তার উপর এমন ঘটনা ঘটতে দেখে উপস্থিত কেউ কেউ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, ফলে প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু শুভম পারেননি। তাঁর এই মৃত্যুকে তাই ‘আত্মত্যাগ’ হিসাবেই দেখছেন পরিবার। তাঁদের দাবি, ‘শুভম বিপদের মুখে পালিয়ে যায়নি। বরং গর্বের সঙ্গেই জানিয়েছিল যে, ও একজন হিন্দু। তার পরই ওকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই সাহস-ও তো সাধারণ নয়। এ কাজ বীরত্বেরই।’ আর তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের আবেদন, নিহত শুভমকে দেওয়া হোক শহিদের মর্যাদা। কানপুরের সাংসদের মাধ্যমেই তাঁদের ইচ্ছে তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। জানা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী দ্বিবেদী পরিবারের সঙ্গে দেখাও করতে পারেন। সেখানেও তাঁরা এই ইচ্ছের কথা জানাবেন বলেই শোনা গিয়েছে।
সন্ত্রাস হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু যে মর্মান্তিক ঘটনা তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। এবং ভারত রাষ্ট্রের তরফ থেকে এর যা জবাব দেওয়া উচিত, তা দেওয়াও হয়েছে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor)-এর দৌলতে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিঘাঁটির উপর কড়া আঘাত হানা হয়েছে। এক ধাপ এগিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, সরকার আর সরকারের মদতপুষ্ট জঙ্গিহানাকে এর পর থেকে আর আলাদা করে দেখবে না ভারত। কূটনৈতিক স্তরেও পাকিস্তানকে উচিত জবাবই দেওয়া হয়েছে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় খুশি সন্তানহারার পরিবার। যেভাবে ভারত এতজন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যুর জবাব দিয়েছে, তার জন্য কুর্নিশই জানিয়েছে দ্বিবেদী পরিবার। তবে, পাশাপাশি সন্তানের জন্য সম্মানও প্রার্থনা করছেন তাঁরা। তাঁদের একটাই কথা, অর্থ নয়, তাঁরা চলে যাওয়া সন্তানের বীরের সম্মানই কামনা করছেন। স্বামীর জন্য শহিদের সম্মান চাইছেন স্ত্রী আশান্যাও।
ধর্মপরিচয়ের ভিত্তিতেই হয়েছিল পহেলগাঁও হামলা (Pahalgam Terror Attack)। সেই ধর্মপরিচয় গোপন না করে দেশের ‘আত্মা’কে তুলে ধরেছেন নিহত শুভম, এমনটা দাবিও করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। সাধারণত, দেশরক্ষায় যাঁরা আত্মত্যাগ করেন, তাঁদেরই শহিদের মর্যাদা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে, সেই দেশরক্ষা বিষয়টিকেই একটু অন্যভাবে দেখছেন দ্বিবেদী পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের যুক্তি, বন্দুকের নলের মুখে ধর্মবিশ্বাস গোপন না-করা দেশের স্বরূপকে তুলে ধরেছে। আর, দ্বিতীয়ত শুভমই যেহেতু প্রথম সন্ত্রাসীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার জন্য কেউ কেউ পালিয়ে প্রাণে বাঁচতেও পেরেছেন। এই দুই যুক্তিতেই সন্তান শহিদ হয়েছেন বলেই মনে করছেন তাঁরা। কিন্তু সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতার দেশে ধর্মপরিচয়ের কারণে মৃত্যুবরণ কি সত্যিই শহিদের মর্যাদা পেতে পারে? সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার উপরই নির্ভর করছে।