মুঘল যুগের পর এবার কোপ সংঘের ইতিহাসেও। গান্ধীহত্যার পরবর্তীতে সংঘকে যে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই তথ্যই এবার মুছে ফেলল NCERT। সম্প্রতি দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে এমনই বদল করেছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং। ঠিক কী কী অভিযোগে বিদ্ধ সিলেবাস কমিটি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বদলে যাচ্ছে ইতিহাস। স্কুলের পাঠ্যক্রম থেকে বাছাই করা অংশ স্রেফ বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর সে কাজ হচ্ছে খোদ NCERT তথা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’-এর তত্ত্বাবধানেই। মুঘল যুগের পর এবার কোপ পড়ল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ করার অধ্যায়েও। গান্ধীহত্যার পরে সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানোর দায়ে যে সংঘকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই তথ্য দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্য বই থেকে স্রেফ মুছে ফেলল NCERT। এমনটাই জানিয়েছে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
আরও শুনুন: ‘আমাদের দেশে তো রান্নার গ্যাস নেই!’, গ্যাসের দাম কমানোর আরজি শুনেই সাফাই নির্মলার
বরাবরই হিন্দুত্ববাদীদের অপছন্দের তালিকায় ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ভারতকে যাঁরা কেবলমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র হিসেবেই প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছিলেন, গান্ধীর হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির আদর্শকে তাঁরা কখনোই পছন্দ করেননি। আর এই অপছন্দেরই চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, যখন নাথুরাম গডসের হাতে নিহত হন মহাত্মা গান্ধী। বলাই বাহুল্য, দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে এই হত্যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। যার জেরে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার কথা ভাবে সরকার। ফলে এই সময়েই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এই সময়পর্বের কথা নথিবদ্ধ ছিল দ্বাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্কুলপাঠ্য বইগুলিতে। কিন্তু এনসিইআরটি-র বই থেকে এবার এই অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। এমনকি দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস বই থেকে নাথুরাম গডসে-র সম্পূর্ণ পরিচয়ও উড়ে গিয়েছে রাতারাতি। গডসে যে পুনের ব্রাহ্মণ ছিলেন, তাঁর কাজে ও কথায় মুসলিমবিদ্বেষের ছাপ পাওয়া যায়, এবং তিনি একটি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী সংবাদপত্র সম্পাদনা করতেন যেখানে গান্ধীর প্রতি কড়া আক্রমণ শানানো হয়েছিল, এই সব তথ্যই বাদ পড়েছে বই থেকে, অভিযোগ এমনটাই।
আরও শুনুন: ‘বিজেপির শাসনে সাম্প্রদায়িক হিংসা হয় না!’ শাহের মন্তব্যে কপিলের কটাক্ষ, ‘ফের জুমলা’
২০২২ সালে এনসিইআরটি-র তরফে পাঠ্য বই থেকে যে বিষয়গুলি বাদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই তালিকায় আরএসএস-এর নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ছিল না। তবে সেখানে গুজরাট হিংসা বাদ পড়া বা মুঘল ইতিহাস বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেখে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি ছিল, এ সবকিছুই হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক ভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এবার এনসিইআরটি-র এই নয়া পদক্ষেপের জেরে সেই দাবিতেই শিলমোহর পড়ল বলে মনে করছেন অনেকেই।