ছোটবেলা থেকেই রামায়ণের প্রতি আগ্রহ। বিগত ৩৫ বছর ধরে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে রামচরিতমানস পাঠ করে শোনান। এবার রাম মন্দিরেও যেতে চান যোগিরাজ্যের সেই মুসলিম ব্যক্তি। কার কথা বলছি জানেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
রামের নামে মুছবে ধর্মের ভেদ। মন্দির প্রতিষ্ঠার আগেই সেকথা জানিয়েছিল রাম মন্দির কর্তৃপক্ষ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ডাকও পেয়েছিলেন ভিনধর্মের মানুষজন। এবার সেই রাম মন্দিরে গিয়ে রামের ভজন গাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যোগিরাজ্যের মুসলিম ব্যক্তি। বিগত ৩৫ বছর ধরে রামচরিতমানস কথকতা করাই যাঁর অন্যতম পছন্দের কাজ।
আরও শুনুন: ‘বেঁচে থাকতে মন্দির হবে ভাবিনি’, রাম মন্দির উদ্বোধনের আবহে আপ্লুত অয্যোধ্যার ‘রাজা’
কথা বলছি, মহম্মদ ইসলাম সম্পর্কে। ছোটবেলা থেকেই রামায়ণের প্রতি তাঁর অন্যরকমের টান। অল্প বয়সেই সাত কাণ্ড রামায়ণ শেষ করেন। বিশেষ পছন্দের ছিল, সুন্দরকান্ড। বয়স কম হলে কী হবে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সঙ্গীদের নিয়ে সেই সুন্দরকান্ড পাঠ করতে যেতেন মহম্মদ। ভাবছেন তো, নাম মহম্মদ আর তিনিই কি না রামায়ণ পাঠ করেন! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। যোগীরাজ্যের মির্জাপুর অঞ্চলের বাসিন্দা মহম্মদকে সহজেই সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। ছোট থকেই ধর্মবিশ্বাসের উর্ধ্বে গিয়ে রামের প্রতি ভক্তি আর ভালোবাসা অনুভব করেন তিনি। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রামের ভজন গাওয়াই অন্যতম পছন্দের কাজ হিসেবে বেছে নেন। দীর্ঘদিন রামলীলা-য় অংশ নিয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে এখনও রামায়ণের এই মঞ্চরূপ দেখা যায়। প্রায় যাত্রার আদলে রামায়ণের কিছু বিশেষ অংশ সেখানে অভিনয় করা হয়। তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধ থেকে আরম্ভ করে, সীতা হরণ সবই চলে খোলা মঞ্চে। সেখানে অভিনয় করা রামকেই গ্রামের সহজ সরল ভগবান ভেবে নিতেন। সেই রামলীলায় মূলত রামের ভজন গাইতেন মহম্মদ। শুনে অবশ্য বোঝার উপায় থাকতো না এই গান কোনও মুসলিম গাইছে। কারণ নিজের গানে এতটাই দরদ এবং ভক্তি মিশিয়ে দিতে পারতেন যোগিরাজ্যের মহম্মদ। সে সময় বাংলা, বিহার, গুজরাট থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভজন গাইতে যেতে হত তাঁকে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রামচরিতমানস পাঠ করা শুরু করেন মহম্মদ। খোলা মঞ্চ ছেড়ে লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই ভজন পাঠ করে শোনাতেন তিনি। এভাবেই প্রায় ৩৫ বছর ধরে রামের নামগান করেই কাটিয়েছেন মহম্মদ। এবার তাঁর ইছা সদ্য প্রতিষ্ঠিত অযোধ্যার রামলালাকেও একবার দর্শন করবেন। অযোধ্যার মন্দির প্রতিষ্ঠার আবহেই নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ্যে এনেছেন তিনি। রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠায় উচ্ছ্বসিত হয়েই একথা জানিয়েছেন যোগিরাজ্যের মহম্মদ। ইতিমধ্যেই সাধারন মানুষের জন্য রামলালার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। দলে দলে রাম ভক্তরা ভিড় জমাতে শুরুও করেছেন মন্দিরে। সেই ভিড়ে তিনিও কবে শামিল হবেন, সেই আশাতেই দিন গুনছেন মহম্মদ।