হিন্দুত্বের পাল্লা ভারী কার দিকে! আপাতত সেই খাতেই বইছে দেশের রাজনীতি। এরই মধ্যে হজরৎ মহম্মদকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের অস্বস্তি বাড়ালেন বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দল। সেই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কানপুর এলাকা। প্রমাদ গোনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রাতারাতি কেড়ে নেওয়া হয় ওই দুই বিজেপি কর্মীর পদ। যাতে কার্যত খুশি বিজেপির সংখ্যালঘু শাখা। কী বলছে তারা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
গত কয়েক মাসে দেশ জুড়ে বারবার উস্কে উঠেছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির হাওয়া। দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান থেকে শুরু করে একাধিক জায়গা থেকে হিংসার খবর ছড়িয়েছে। তার উপর জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশ জুড়ে ছড়িয়েছে উত্তাপ। আর সেই লাইনে রয়েছে শাহি ইদগাহ-সহ আরও বেশ কয়েকটি ধর্মস্থান। সেসব মামলা গড়িয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত পর্যন্ত।
এরই মধ্যে হজরৎ মহম্মদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে ফের বিতর্ক বাড়িয়েছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র নূপুর শর্মা ও দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র নবীন কুমার জিন্দল। যা স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তির। বিষয়টি নিয়ে কানপুরেও অশান্তির আবহ তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই। নূপুরদের মন্তব্যের প্রতিহবাদে স্থানীয় বাজার বন্ধ রাখার ডাক দেয় স্থানীয় সংখ্যালঘু সংগঠন। সে ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় বচসা। যা অচিরেই রূপ নেয় হাতাহাতির। চলে দোকান ভাঙচুর। সব মিলিয়ে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কানপুর।
আরও খবর: বেঙ্কটরমন মন্দিরের জমিতে দাঁড়িয়ে টিপু সুলতানের প্রাসাদ, সমীক্ষার দাবি হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর
না, শুধু কানপুরেই নয়। তাঁদের ওই কথার গুরুতর প্রভাব পড়ে প্রাচ্যের দেশগুলির উপরে। চাপের মুখে পড়ে সেসব দেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের উপরেও। টুইটারে ভারতকে ব্লক করার কথাও ঘোষণা করে বেশ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এমনকি সেসব দেশের খোলা বাজার থেকেও ভারতীয় পণ্য তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংশ্লীষ্ট দেশের প্রশাসন। সামগ্রীক ভাবেই ভারতীয় সমস্ত পণ্য বাজার থেকে তুলে নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেয় তারা। চাপ বাড়ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের উপর।
জল মাথার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে দেখে শেষমেশ ময়দানে নামে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। রাতারাতি নেওয়া হয় বড় সিদ্ধান্ত। সাসপেন্ড করা হয় ওই দুই বিজেপি মুখপাত্রকে। ইতিমধ্যে ক্ষমাও চেয়েছেন নূপুর। তবে তাতেও বিতর্ক থামেনি। শেষপর্যন্ত ওই দুই নেতাকে দলের প্রাথমিক পদ থেকে বহিষ্কার করে বিজেপি। তাছাড়া দলের সমস্ত দায়িত্ব থেকেও তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্তও। এমনকি বিজেপির তরফ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে এ-ও জানানো হয়, সব ধরণের ধর্মকেই সমান চোখে দেখে ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলে নূপুরের মন্তব্যকে কোনও ভাবে সমর্থন করা তো দূরের, গোটা ব্যাপারটির তীব্র নিন্দা করছে বিজেপির নেতৃত্ব।
আরও শুনুন: তাজমহল চত্বরে নমাজ পড়ার অভিযোগ, গ্রেপ্তার চার পর্যটক
আর বিজেপির এমন সিদ্ধান্তে কার্যত খুশি দলের সংখ্যালঘু শাখা। মোদি সরকার যে ন্যায়ের পক্ষে, তেমনটাই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে বলে জানান ভারতীয় জনতা পার্টির মাইনরিটি মোর্চার প্রধান জামাল সিদ্দিকি। তাঁর কথায়, ওই দুই নেতার এমন বক্তব্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে আঘাত লেগেছে। আর একটা বিজেপির সংস্কৃতি নয় বলেই মন্তব্য জামালের। তবে তাঁদের দলের প্রতি আস্থা ছিল বলেই জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উন্নয়নের রাজনীতি করেন। তাঁরা ঘৃণার রাজনীতিকে সমর্থন করেন না বলেই মত জামালের। দেরিতে হলেও মোদি সরকারের সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দিয়েছে যে বিজেপি অন্য দলগুলির থেকে আলাদা।
নেতামন্ত্রীদের আলটপকা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়া কোনও নতুন ঘটনা নয়। তার জন্য মাঝেমধ্যেই রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়তে হয় দলকে। তবে এবার যেভাবে প্রাচ্যের দেশগুলোর একযোগে বিরোধিতার মুখে পড়েছিল ভারত, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। যার ড্যামেজ কনট্রোলে রাতারাতি ময়দানে নামতে হয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। সব মিলিয়ে এই ঘটনা যে বিজেপিকে বেশ বিপাকে ফেলেছে তা বোঝাই যাচ্ছে।