নবরাত্রির সময় বন্ধ রাখতে হবে মাংস দোকান। দক্ষিণ দিল্লি পুরসভার এই ফরমান প্রকাশ্যে আসার পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। এবার সেই প্রসঙ্গেই দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। কী বললেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
ফরমান জারি করেছে দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা। নবরাত্রির সময় খোলা রাখা যাবে না মাংসের দোকান। আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জারি থাকবে এই নিয়ম। নয়া এই ফরমানকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এবার সেই প্রসঙ্গেই সাংবিধানিক অধিকার মনে করিয়ে দিয়ে ফরমানের বিরোধিতা করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
আরও শুনুন: ‘নেইল ফাইলস’ বানাতে চান, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবিকে নিয়ে বেজায় ঠাট্টা টুইঙ্কলের
কেন নবরাত্রির সময় মাংস দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? ব্যাখ্যা দিয়ে, দক্ষিণ দিল্লি পুরসভার মেয়র মুকেশ সুরিয়ান জানিয়েছেন, এই সময়টায় সাধারণত কোনও বাড়িতেই আমিষ রান্না হয় না। এখন মন্দিরের কাছাকাছি দোকানে খোলা অবস্থায় মাংস বিক্রি করলে অনেকেই অস্বস্তিতে পড়ছেন। তাঁদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগছে। এমনকী পুজো দিতে যাওয়ার সময়ও তাদের মাংসের গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বেশিরভাগ মাংস দোকানের নোংরা খোলা জায়গাতেই ফেলে দেওয়া হয়, যা নিয়ে টানাটানি করে রাস্তার কুকুররা। সব মিলিয়ে এই দৃশ্যটা নবরাত্রির সময়ে মোটেও স্বস্তির নয়। তাই মন্দিরের কাছাকাছি সমস্ত মাংস দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। এ ছাড়া মন্দিরের পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়ালও রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ ফরমানে। প্রত্যাশিত ভাবেই এহেন নিষেধাজ্ঞা বিতর্ক উসকে দিয়েছে। ধর্মীয় ভাবাবেগের নামে কি প্রশাসন এ ভাবে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারে? নানা দিক থেকেই উঠে আসছে এই প্রশ্ন।
আরও শুনুন: খুদের মাছ ধরার ভিডিওতেই লুকিয়ে জীবনের সাফল্যের মন্ত্র, চিনিয়ে দিলেন আনন্দ মাহিন্দ্রা
এই প্রসঙ্গেই দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকারের কথা মনে করিয়ে দিলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। জানালেন, তিনি নিজেও দক্ষিণ দিল্লির বাসিন্দা। আর যে কোনও সময় মাংস খাওয়ার অধিকার যেমন তাঁকে দিয়েছে সংবিধান, তেমনই একজন মাংস বিক্রেতাকে তাঁর দোকান খুলে রাখার স্বাধীনতাও দিয়েছে। এটুকুই তাঁর বক্তব্য। কিন্তু এখানে পূর্ণচ্ছেদ টানলেও আসলে অনেক কথাই বলে দিয়েছেন মহুয়া। কেন মাংস দোকান বন্ধ করা হচ্ছে, এর পিছনে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ধর্মবিশ্বাসকে রক্ষিত করা হচ্ছে নাকি হচ্ছে না, সে প্রশ্নে তিনি যাননি। তবে এই সিদ্ধান্ত যে আদতে সংবিধানবিরোধী তা এক কথাতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।
শুধু দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা নয়, পূর্ব দিল্লিতেও নবরাত্রির সময়ে বেশ কয়েকদিন মাংস দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একাধিক বিজেপি বিরোধী দল এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে। পালটা দিয়ে দিল্লির বিজেপি নেতা প্রকাশ সাহিব বলেছেন, নবরাত্রির সময় মানুষ উপবাস করে পুজো দেন। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হোন বা অন্য কেউ, সকলেরই তো এই সংস্কৃতিকে সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু সম্মান প্রদর্শন কি সংবিধান লঙ্ঘন করে হতে পারে? ছোট্ট অথচ তাৎপর্যপূর্ণ মন্ত্রে সেই প্রশ্নই যেন তুলে দিলেন মহুয়া মৈত্র।