খুব শিগগিরই অযোধ্যায় যাচ্ছেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে। তাঁর উত্তরপ্রদেশ সফরের আগে পোস্টারে ঢাকল মুম্বইয়ের লালবাগ এলাকা। যদিও সে সম্পর্কে মুখ খুলতে নারাজ এমএনএস কিংবা রাজ। কী লেখা ছিল সেই পোস্টারে, আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহারে আপত্তি জানিয়ে পথে নেমেছিলেন মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে। জড়িয়ে ছিলেন শিবসেনার সঙ্গে সংঘাতেও। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের হিন্দুত্ববাদী আদর্শ থেকে সরে এসেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা। এমন অভিযোগও করেছিলেন রাজ। এ নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মহারাষ্ট্র। ধর্মস্থান, বিশেষত মসজিদগুলি লাউডস্পিকার ব্যবহার বন্ধ না করলে মাইকে হনুমান চালিশা পাঠের হুমকিও দেয় এমএনএস। না, শুধু হুমকি নয়। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র-সহ দেশের একাধিক জায়গায় হনুমান চালিশা পাঠেরও বন্দোবস্ত করে রাজের বাহিনী। তাতে তাদের সঙ্গ দিয়েছে অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী দলগুলিও। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের বাড়ির সামনে হনুমান চালিশা পাঠের চেষ্টা করে গ্রেপ্তার হন অমরাবতীর নির্দল সাংসদ নভনীত কৌর রানা ও তাঁর স্বামী বাদনেরার বিধায়ক রবি রানা। সে নিয়েও কম জলঘোলা হয়নি। এমএনএসের হুমকির পরেই রাজ্যের বহু মসজিদ থেকে সরিয়ে ফেলা হয় লাউডস্পিকার। রাতারাতি উত্তরপ্রদেশ থেকে লাউডস্পিকার সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
আরও শুনুন: লাউডস্পিকারে আজানের পালটা হনুমান চালিশা পাঠ, অশান্তির আশঙ্কা কর্নাটকে
জুনেই উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরের। সেখানে একটি জনসভা করার কথা রয়েছে তাঁর। দেখা করবেন যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে। অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণের স্থলও ঘুরে দেখার কথা রয়েছে তাঁর। এমনিতেই জ্ঞানবাপী-সহ একাধিক মামলায় তেঁতে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। ফলে তাঁর অযোধ্যা সফর ঘিরে বাড়তি উদ্বেগে রয়েছেন এমএনএস নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে আবার হুমকি পোস্টারে ঢাকল মুম্বইয়ের লালবাগ এলাকা।
না, রাজকে হুমকি দেওয়া হয়নি মোটেও। বরং সেই পোস্টারে দাবি করা হয়েছে উল্টোটাই। সেখানে লেখা হয়েছে, রাজ ঠাকরের উপরে কোনও রকম হামলা বা আক্রমণের ঘটনা ঘটলে, পুরো মহারাষ্ট্র জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
আরও শুনুন: জ্ঞানবাপী-বিতর্কে ওয়াইসিকে তোপ মালব্যের, মসজিদে রয়েছে আরও দেবদেবীর মূর্তি, দাবি অজয় মিশ্রের
রাজ ঠাকরের অযোধ্যা সফরকে কেন্দ্র করে প্রথম থেকেই দানা বেঁধেছে বিতর্ক। লাউডস্পিকার বিতর্ককে ভাল ভাবে নেয়নি অনেকেই। রাজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকে। এমনকি ব্যাপারটা ভাল ভাবে নেননি বহু ধর্মীয় সংগঠনের নেতারাও। অযোধ্যার অন্যতম পুরোহিত মহন্ত কমল নয়ন দাসের মতে, অযোধ্যা আসার আগে উত্তর ভারতের বাসিন্দাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ রাজের। অন্য কারওর ধর্মীয় আবেগে আঘাত করার অধিকার তাঁর নেই বলেই মন্তব্য করেন তিনি। একই কথা শোনা গিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অটওয়ালের মুখেও। অযোধ্যায় এসে যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে দেখা করুন, তা চান না উত্তরপ্রদেশের গোন্দার সাংসদ ও বিজেপি নেতা ভূষণ শরণ সিংহও। ক্ষমা না চাইলে রাজকে অযোধ্যায় ঢুকতে দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সব মিলিয়ে রাজের অযোধ্যা সফর ঘিরে ক্রমশ চড়া হচ্ছে বিরোধিতার সুর। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্রের লালবাগ এলাকায় ওই হুমকি পোস্টার কারা সেঁটেছে তা পরিষ্কার নয় স্থানীয় প্রশাসনের কাছেও। এ নিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে চাননি রাজ ঠাকরে বা নবনির্মাণ সেনা কোনও কর্মীই।