বয়কট গ্যাং-এর মুখে ‘পাঠান’-এর সাফল্য কিংবা রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’- নিছকই দুটি ঘটনা! নাকি এই দুই ঘটনার মধ্যে দিয়েই মানুষের মন বদলের নতুন হাওয়ার খোঁজ মিলছে? আসুন সময়ের নিরিখে এই দুটি ঘটনাকে একটু খতিয়ে দেখা যাক।
সাম্প্রতিক সময়ের দুটি ঘটনা প্রায় প্রত্যেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রথমটি হল, সুপারস্টার শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ ছবির সাফল্য। যা অনেকের কাছেই বয়কট প্রবণতার জবাব বলে গণ্য হচ্ছে। দ্বিতীয়টি হল, রাহুল গান্ধীর ভারত জোড় যাত্রায় রাজনীতিবিদ ছাড়াও বহু মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। যা কিনা ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালবাসার যাত্রা বলেই চিহ্নিত হয়েছে। এই দুই ঘটনা পরস্পর সম্পর্কিত না হলেও, সময়ের নিরিখে যেন একটা নতুন ভাষ্য হয়ে উঠেছে। সিনেমা থেকে রাজনীতি, ঘৃণাকে পেরিয়ে ভালবাসার কাছেই যে মানুষ পৌঁছতে বেশি আগ্রহী, এ দুটি ঘটনা যেন সে কথাই জানিয়ে দিয়েছে দৃঢ় স্বরে।
আরও শুনুন: ‘বয়কট গ্যাং’-এর সঙ্গে ছায়াযুদ্ধে জয়, কোন মন্ত্রে হাসিল শাহরুখের?
অথচ সময়টা যে ভাল নয়, তা আমরা অনুভব করি। জাতিগত আর ধর্মীয় বিদ্বেষের বিষবাষ্পে যেন ভারাক্রান্ত দেশের হাওয়া। মানুষে মানুষে বেড়েছে বিচ্ছিন্নতা, পারস্পরিক বিদ্বেষ এবং ঘৃণা। নেটদুনিয়ায় হেট-স্পিচ যেন অতিমারীর মতোই ছড়িয়ে পড়েছে। এর কারণ অনেকটাই রাজনৈতিক। রাজনীতির উপরমহল থেকে ক্ষমতা দখলের কারণে যে ঘৃণার আবহের সূচনা, তা প্রভাবিত করেছে সমাজের একক ব্যক্তিকেও। এবং দীর্ঘদিন ধরে এই ঘৃণার সংস্কৃতি আমাদের প্রায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে বলা যায়। জেনে কিংবা না-জেনেই হয়তো আমরা এই ঘৃণার ফাঁদে পা দিয়ে ফেলি। সচেতন মানুষ সময়ের এই গভীর অসুখ নিয়ে বহুবার সচেতন করেছেন। কিন্তু এর থেকে মুক্তির উপায় যে ঠিক কী, তার হদিশ যেন সেভাবে মিলছে না।
ঠিক এর মাঝেই ঘটে গেল দুটি ঘটনা। একজন বলিউডি হিরোর কামব্যাক সিনেমা রাজনৈতিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল। নিছকই একটি সিনেমা থেকে তা প্রায় ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসার উত্তর হয়ে উঠল। শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ ছবির কথাই বলছি। মুক্তির আগেই ছবি ঘিরে একাধিক বিতর্ক। বয়কটের হুমকি। এমনকী মুখ খুললেন রাজনৈতিক নেতারাও। কিন্তু খেলা ঘুরিয়ে দিলেন জনতা। প্রিয় নায়কের প্রতি তাঁদের অচলা ভক্তির নমুনা দেখিয়ে দলে দলে সিনেমা হলে গেলেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এই সিনেমা দেখার মধ্য দিয়ে ওই বয়কট গ্যাং-কে যে জবাব দেওয়া হচ্ছে, এমনটাই মনে করলেন বেশিরভাগ দর্শক। সিনেমা বিপুল সাফল্য পেল। এবং সেই সঙ্গে এ-ও স্পষ্ট হল যে, ঘৃণার আবহকে মানুষই বদলে দিতে চাইছে ভালবাসায়। সমসময়ে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখা মিলল এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যের। গোটা দেশ জুড়ে প্রায় ফকিরের মতোই হেঁটে চললেন রাহুল গান্ধী। তাঁর দলের সমর্থকদের পাশাপাশি বহু বিশিষ্ট ও সাধারণ মানুষ যোগ দিলেন সেই যাত্রায়। গরমাগরম ভাষণ নেই, একে অন্যকে একহাত নেওয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতি নেই। স্রেফ ভালবাসা বিলিয়ে যাওয়াই এই যাত্রার উদ্দেশ্য। আর তা সমর্থন করলেন বহু মানুষ। দুটি ঘটনা একটি চিরপুরাতন কথাকেই যেন আবার নতুন করে বলে ফেলতে চাইছে। তা হল, ঘৃণা মানুষের কাম্য নয়। সে ভালবাসারই কাঙাল। আর তাই যেখানে ঘৃণা পরাক্রমী হয়ে উঠেছে, সেখানে মানুষই খুঁজে নিচ্ছে ভালবাসার শ্রূশুষা। এই উপশম নতুন নয়। তবে সমকালীন পৃথিবীতে এবং এ দেশেও যেন তা হয়ে উঠেছে মেঘে ঢাকা তারা। মানুষের মন বদলের নতুন হাওয়া সেই মেঘ অনেকটাই কাটিয়ে দিতে পেরেছে।
আরও শুনুন: মুক্তির আগেই দেশে ‘পাঠান’-ঝড়, ৩২ বছরের স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে কিং খানের
তবে এই দুই ঘটনায় সাফল্যের চূড়ান্ত বিন্দু নয়। দুটি মাত্র নমুনাকে সামনে রেখেই বলা যাচ্ছে না যে, ঘৃণার দিন ফুরিয়ে এল। বরং আশঙ্কা যে এ দুটি ঘটনা না ব্যতিক্রম হয়েই থেকে যায়। অর্থাৎ আকাশ এখনও অংশত মেঘলা। তবে মানুষই যে রোদ্দুর-উজ্জ্বল ভালবাসার দিন ডেকে আনতে পারে, সে কথা এই দুটি ঘটনাই বুঝিয়ে দিয়েছে ভাল ভাবে। ভালবাসার মরশুমে এই সর্বব্যাপী ভালবাসার গল্পখানা তাই আমাদের প্রাপ্তিই বটে।