কারোর কাছে কমলা। আবার কারোর কাছে লরেন্স পাওয়েল জোবস। সনাতন ধর্মের ভক্ত হিসেবেই উপস্থিত হয়েছেন মহাকুম্ভে। সম্পূর্ণ যোগিনী বেশে। স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্যা তিনি। তবুও শিবলিঙ্গ স্পর্শের অনুমতি পেলেন না তিনি। কিন্তু কেন? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কেউ বলেন কমলা, কেউ বলেন লরেন পাওয়েল জোবস। দুনিয়া তাঁকে চেনে প্রয়াত স্টিভ জোবসের স্ত্রী’র পরিচয়ে। তবে, মহাকুম্ভ তাঁকে চেনে সনাতন ধর্মের একজন ভক্ত হিসাবেই। কুম্ভে যখন ভিড় জমিয়েছেন পুণ্যার্থীরা, তখন সাত সমুদ্র তেরো নদী পার থেকে এসেছেন তিনিও। বিশ্বনাথ মন্দিরে মহাদেবের দর্শনও পেলেন বটে। তবে শিবলিঙ্গ স্পর্শের অনুমতি পেলেন না এই বিদেশিনী ভক্ত।
গায়ে গেরুয়া চাদর। গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। যোগিনী বেশ। কে বলবে, তিনি লরেন পাওয়েল জোবস! ক’দিন পরেই যাঁকে দেখা যাবে ট্রাম্পের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে। আর পাঁচ জন ভক্তের মতোই সাধারণ হয়ে মহাকুম্ভে এসেছেন তিনি। এখানে তাঁর নাম কমলা। স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি মহারাজের শিষ্যা তিনি। স্বামীজিও তাঁকে কন্যার মতোই স্নেহ করেন। তাঁর কমলা নামটিও স্বামীজিরই দেওয়া। বিদেশিনী এই ভক্তকে খুবই ভালোবাসেন তিনি। অন্য দেশের মানুষ হতে পারেন, তবে স্বামীজির কথায়, সনাতন ধর্মের ভাবধারা তাঁকে যেভাবে প্রভাবিত করেছে, তা এক কথায় অনবদ্য। এই ধর্ম-দর্শনের ভিতরই আছে সেই গভীরতা। যা কিনা বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের মানুষকে উদ্বেল করে তুলতে পারে। আগেও এর নমুনা দেখা গিয়েছে। সাম্প্রতিক উদাহরণ হলেন স্বামীজির আদরের কমলা। তাঁর কুম্ভে আসা যে বিশ্বের মানচিত্রে ভারতীয় সংস্কৃতির উজ্জ্বল গৌরবের চিহ্ন বহন করছে, সে বিষয়ে সকলেই নিশ্চিত। তবু একটি বিতর্ক থেকেই গেল।
কুম্ভে যাওয়ার আগে, স্বামীজি নিজে তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরে। সেখানে মন্দির চত্বরে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়েই তিনি পূজা দেন। দর্শন করেন মহাদেবের। কিন্তু শিবলিঙ্গ স্পর্শের অনুমতি পাননি। স্বামীজির প্রিয় শিষ্যা হওয়া সত্ত্বেও দূর থেকে দর্শন করেই ক্ষান্ত হতে হয়েছে তাঁকে। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন স্বামিজি। তাঁর বক্তব্য, হিন্দু ধর্মের ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই কাশী বিশ্বনাথের শিবলিঙ্গ স্পর্শের অনুমতি পান না। এটিই মন্দিরের ঐতিহ্য এবং নিয়ম। স্বামীজির বক্তব্য, একজন আচার্য হয়ে তিনি সেই প্রথা ভাঙতে পারেন না। আর তাই তাঁর প্রিয় শিষ্যা হলেও কমলাকে বাইরেই রেখেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, একবার তিনি নিয়ম ভাঙলে, এই প্রথাই ক্রমে ভেঙে পড়বে। তাই এই কাজ তিনি নীতিগত ভাবেই করতে পারেননি।
স্বামীজি তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বটে। তবে, যে বিদেশিনী ভারতীয় ভাবধারাকে অন্তরে এতখানি গ্রহণ করলেন, তাঁর জন্য কি আর একটু গ্রহিষ্ণু হতে পারে না ধর্মীয় বিধান! প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেল।