করোনা আবহে বাধা পড়েছে বছর বছর পুরী যাওয়া ও জগন্নাথ দর্শনে। তাই ভগবান যেন স্বয়ং এলেন ভক্তের কাছে। খাস কলকাতার বুকেই গড়ে উঠল পুরীর জগন্নাথ মন্দির।
উল্টোডাঙার মুচিপাড়া। পোস্ট অফিসের সামনে চেনা জায়গার চেহারাটাই যেন বদলে গিয়েছে। হঠাৎ করে এলে থমকে যেতে হবে। কলকাতাবাসীর জন্য এ কেবল চমক নয়, পরম প্রাপ্তিও বটে। হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরই এবার উঠে এসেছে শহরের বুকে।
করোনার দৌলতে ঘুরতে যাওয়া এখন দূর অস্ত। এমন অনেকেই আছেন যাদের ডায়েরিতে বছরে অন্তত একবার পুরীতে ঘুরতে যাওয়া ও জগন্নাথদেব দর্শন লেখা থাকে। গত দুবছরে যাব যাব করেও পুরী যাওয়া হয়নি তাঁদের। করোনার কাঁটায় সবই বন্ধ। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পুরীতে জগন্নাথদেব দর্শনে যোগ হয়েছে নানা বিধিনিষেধ। পুরীতে প্রবেশের ছাড়পত্র পেতে ভ্যা কসিনের দুটো ডোজের শংসাপত্র থাকতে হবে, এমনটাই ঘোষণা করেছে ওড়িশা সরকার। আর তাতেই বেশ বিপাকে পড়েছেন ভক্তরা। জগন্নাথ প্রভুর দর্শনে পড়েছে ভাঁটা। তবে, সেই আক্ষেপ আর থাকার কথা নয়। কেননা এবার শহরের বুকেই তৈরি হয়েছে জগন্নাথ দেবের মন্দির, হুবহু পুরীর মন্দিরের আদলেই। রথযাত্রার দিন থেকেই ভক্তদের জন্য খুলে যাচ্ছে এই মন্দির।
আরও পড়ুন : Ratha Yatra: কথায় বলে ‘রথ দেখা কলা বেচা’, কিন্তু কেন জানেন?
কলকাতায় জগন্নাথ দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে কাহিনি। তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনির সহ সভাপতি প্রতাপ দেবনাথ জানিয়েছেন, ‘প্রভু জগন্নাথদেবের কাছে আমি মানত করেছিলাম। আমাদের প্রিয় নেতা সাধন পাণ্ডে গত আটবারের মতো এবারেও জয়ী হলে, কলকাতায় জগন্নাথ দেবের মন্দির তৈরি করা হবে।’ এবারও জয়ী হয়েছেন সাধন পাণ্ডে। মানত রাখতে তাই শুরু মন্দির তৈরির কাজ। টানা একমাস সময় লেগেছিল প্রস্তুতিতে। নকশা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের। বিগ্রহেও একই আদল। পুরীর মন্দিরের যাঁরা বিগ্রহ তৈরি করেছেন তাঁদের বংশধরদের হাতেই দায়িত্ব ছিল বিগ্রহ তৈরির। জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রার বিগ্রহের আদলও এক। জগন্নাথ দেবের মূর্তি ৫ ফুটের। ৩০০ কেজি নিমকাঠ দিয়ে তৈরি এই মূর্তি। প্রথম দর্শনেই অনেকে হয়তো অবাক হবেন। মনে হবে, এ যেন প্রভু জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা পুরীর মন্দির থেকে এসে বিরাজ করছেন কলকাতার জগন্নাথ মন্দিরে। কলকাতায় তৈরি হওয়া জগন্নাথ মন্দিরের উচ্চতাও পুরীর মন্দিরের মতোই, ৩২ ফুট। সামনে সিংহদুয়ার। এই প্রবেশপথও অবিকল একইরকম। পুরো মন্দির তৈরি করা হয়েছে ফাইবার গ্লাস দিয়ে। প্রবেশের সময় দেওয়ালে আঁকা সমুদ্রসৈকতও সেই সমুদ্রসৈকতেরই ঝলক। মন্দিরের কারিগর প্রখ্যাত শিল্পী মিন্টু পাল।
সমস্ত নিয়ম মেনেই ভগবানের উদ্দেশে নিবেদন করা হবে ছাপ্পান্ন ভোগ। পুরীর রীতি মেনেই পালন করা হবে আচার-অনুষ্ঠান। স্নানযাত্রা, রথযাত্রা। ভক্তদের নিয়মিত দর্শন দেবেন প্রভু জগন্নাথ। রথের দিন থেকে তাই কলকাতায় বসেই হতে পারে জগন্নাথ দর্শন।