আদুল পা, পরনে সাদামাটা শাড়ি। চিরাচরিত আদব-কায়দার বাইরে গিয়ে পদ্ম-মঞ্চে ব্যতিক্রমী পরিবেশকর্মী তুলসী গৌড়া। সোমবার নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে পদ্ম-পুরস্কার তুলে নিলেন ৭২ বছরের এই আদিবাসী অরণ্য-কন্যা। নিজের ভঙ্গিতে সম্ভাষণ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে উপস্থিত সকলকে। সব কিছুতেই নিজস্বতার ছাপ। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা চলল তাঁকে নিয়েই।
‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব দ্যা ফরেস্ট’- এই নামেই ডাকা হয় তাঁকে। জঙ্গল, গাছপালা সম্পর্কে এমন কিছু নেই যা তিনি জানেন না। নিজের হাতে কত লক্ষ গাছ যে তিনি রোপণ করেছেন, তাঁর হিসেব আজ বোধহয় নিজেই ভুলে গিয়েছেন পরিবেশবিদ তুলসী গৌড়া। সেইসব চারাগাছ আজ বৃক্ষ। মেঘে মেঘে কম বেলা পেরোননি তুলসীও। অবশেষে মিলল সম্মান। সোমবার নয়াদিল্লিতে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পেলেন কর্নাটকের হালাক্কি আদিবাসী সম্প্রদায়ের এই বৃদ্ধা।
আরও শুনুন: শিকার গণধর্ষণের, তবু নারী পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অক্লান্ত Sunitha Krishnan
আর্থিক ভাবে খুবই পিছিয়ে পড়া পরিবারে জন্ম তাঁর। খুব ছোটবেলায় হারিয়েছেন বাবাকে। মাত্র বারো বছর বয়সে বনদফতরের অস্থায়ী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জঙ্গলের সঙ্গে ভাব হয় তাঁর। তার পরে সেই জঙ্গলই হয়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। পরে অবশ্য বনদফতরের তরফে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয় তুলসীকে। গত ছ-দশক ধরে জঙ্গল সংরক্ষণে সর্বক্ষণ কাজ করে গিয়েছেন তিনি।
সেই ভাবে তথাকথিত পড়াশোনা করা হয়নি কোনওদিনই। কই, তাতে তো আটকায়নি কিছুই। জঙ্গল, গাছপালা, পশুপাখি সম্পর্কে অবাধ জ্ঞান তাঁর। জঙ্গলের ভাষা চেনেন তিনি। আর সেই জানা-বোঝাকে ভাগ করে দিতে চান আগামী প্রজন্মের কাছে। জঙ্গল না বাঁচলে যে পৃথিবী বাঁচবে না, তুলসী চান আগামী প্রজন্ম সেটা বুঝুক। পরিবেশকে বাঁচাক তাঁরা।
আরও শুনুন: নারীপ্রগতির মশাল জ্বালিয়ে চলে গেলেন কমলা ভাসিন
সোমবার পদ্ম-সম্মানের মঞ্চ যেন হাঁ করে সেই ভূমিকন্যার দিকেই তাকিয়ে রইল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরল তাঁর কথা, তাঁর ছবি। তবে এসব কিছুই ছুঁতে পারল না তুলসীকে। দিনের শেষে জানালেন, গাছেদের মতো আনন্দ তাঁকে আর কিছুই দিতে পারেনি। এমনকি পদ্মসম্মানও নয়। আর এইখানেই তিনি ব্যতিক্রমী।