বাংলার ঘরোয়া পান্তা ভাত। এটাই ছিল মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া ত্রয়োদশ সিজনের ফিনালের রেসিপি। আর তাতেই বাজিমাত করলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরি। প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভিনদেশি বিচারকরা। বাংলার সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরায় আবেগের জোয়ারে ভাসছে দুই বাংলা।
কথায় বলে, পান্তা ভাতে টাটকা বেগুনপোড়া। এর স্বাদ চাখেননি এমন বাঙালি খুব কম আছেন। গ্রামের লোকজন তো বটেই শহরের আধুনিক মেনুচার্টেও পান্তা ভাত এখন বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। বিভিন্ন বাঙালি রেস্তোঁরায় জায়গা করে নিয়েছে পান্তা ভাত। সেই পান্তা ভাতকে মাস্টারশেফের মতো আন্তর্জাতিক রান্নার আসরে তুলে এনে হইচই ফেলে দিয়েছেন ভিনদেশি বাঙালি কন্যা কিশোয়ার চৌধুরী।
সন্ধেবেলা রান্না করা ভাত বেঁচে গেলে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখা হয়। সকাল হলেই সেই জল মেশানো ভাত হয়ে যায় পান্তা ভাত। শরীর মন ঠান্ডা রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। এমনটাই বলতেন মা, ঠাকুমারা। আর এর সঙ্গে জুটিতে থাকত বেগুনপোড়া বা আলু ভর্তা, ফুলুরি, কাঁচা পেঁয়াজ আর কাঁচা লঙ্কা। মুঘল আমলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পান্তাভাত খাওয়ার চল ছিল। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের দিনও পান্তাভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রথা আছে। সেই পান্তাভাত এবার বিশ্বের দরবারে। সৌজন্যে কিশোয়ার চৌধুরি। এর আগেও খিচুড়ি, বেগুন ভর্তা করে তাক লাগিয়েদিয়েছিলেন বিচারকদের, সেই স্বাদে অনেকদিন বুঁদ হয়েছিলেন তাঁরা । কালা ভুনার রেসিপি দিয়ে কিশোয়ার মাত করেছিলেন মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার বিচারকদের। তারপর আলোড়ন ফেলে তাঁর রান্না করা মাছের ঝোল। সেই ঘোর কাটতে না কাটতেই আবার চমক। এবার পান্তা ভাত।
আরও শুনুন : Pandemic কাড়ছে শৈশব! মহামারীর ধাক্কায় কেন এত বাড়ছে Child Labour?
কিশোয়ার চৌধুরীর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা। ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাকাপাকিভাবে থাকা শুরু করেন। মা কলকাতার মেয়ে। কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়াতেই। কিন্তু শিকড়ে জড়িয়ে আছে দুই বাংলার স্বাদ-আহ্লাদ। প্রিন্টিং ব্যবসার সঙ্গে তাই রান্না নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিলই। আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। বিশেষ করে দুই বাংলার রন্ধনপ্রণালীই ছিল কিশোয়ারের পছন্দের বিষয়। যে রাঁধে সে তো চুলও বাঁধে, সেখান থেকেই যোগ দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার মাস্টারশেফ প্রতিয়োগিতায়। সেমিফাইনাল রাউন্ডে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে লড়াই করে টপ থ্রি-তে জায়গা করে নেন কিশোয়ার।
এরপর শুরু ফিনালে রাউন্ড। বিচারকের আসনে তখন মেলিসা লিয়ং, অ্যান্ডি অ্যালেন ও জক জনফ্রিল্লো। বিচারকদের সামনে কিশোয়ার পরিবেশন করলেন, সাদা প্লেটে জল দেওয়া ভিজে পান্তা ভাত, সঙ্গে শুকনো লঙ্কা, নুন, ধনেপাতা দিয়ে মাখা আলুর ভর্তা, স্যালাড। পরিবেশনের সময় কিশোয়ার বলেছিলেন, এই ধরনের খাবার কোনও রেস্তোরাঁয় পাওয়া যাবে না। ফিনালেয় আমার শেষ রান্নার স্বাদ গ্রহণ করুন। টেস্ট করার পর অভিভূত মেলিসা বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই খাবার স্বাদে গন্ধেও তার ঐতিহ্যকে বহন করছে। অ্যান্ডি অ্যালেন বলেন, ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাতের সঙ্গে হলুদ রংয়ের আলু সেদ্ধ আর তৈলাক্ত মাছ অপূর্ব মেলবন্ধন। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেন কিশোয়ার।
আরও শুনুন: Daal: বাঙালির পাতে কবে থেকে উঠল ডাল?
ফিনালের ভিডিও দেখে প্রশংসার বন্যা সোশাল মিডিয়ায়। বিচারকদের পাশাপাশি ভোজনরসিকদেরও মন জয় করে নিয়েছেন কিশোয়ার । পান্তা ভাতকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার এই অভিনব কৌশলে গর্বিত দুই বাংলার মানুষ।