ইসলাম ছেড়েছিলেন আগেই। কিন্তু তারপরেও শরিয়ত আইনের হাত তাঁকে ছাড়ছে না। ধর্মের হাত ছাড়াতেই এবার সরাসরি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলেন কেরলের এই মুসলিম মহিলা।
মানুষ নয়, ধর্মের থেকে বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন কেরলের এক মুসলিম মহিলা। নিজে ইসলাম ধর্ম পালন না করলেও, ধর্মীয় আইন থেকে যে রেহাই মিলছে না তাঁর। আর কেবল তিনিই নন, সেই বাঁধনের জের সইতে হবে তাঁর মেয়েকেও। মা মেয়েকে তাঁর উত্তরাধিকারী বলে মনে করলেও, শরিয়ত আইন মোতাবেকই মায়ের যাবতীয় সম্পদের অধিকার মিলবে না মেয়ের। আর সন্তানের জন্যই এবার রুখে দাঁড়ালেন মা। সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সন্তানের জন্য রক্ষাকবচ পেতে চাইলেন তিনি। কেরলের বাসিন্দা সফিয়া পিএম-এর দাবি, তাঁকে ইসলামে অবিশ্বাসী বলে ঘোষণা করুক দেশের শীর্ষ আদালত, যাতে আর কোনওভাবেই এই ধর্মের সূত্র ধরে তাঁর মেয়ের উত্তরাধিকারে কেউ ভাগ বসাতে না পারে। ব্যক্তিগত হয়েও এই আবেদন আসলে এক সামগ্রিক প্রশ্নের পথ খুলে দিল ফের। যিনি ইসলাম ধর্ম ছাড়ছেন, তাঁর ক্ষেত্রে ১৯২৫ সালের ধর্মনিরপেক্ষ উত্তরাধিকার আইন মানা হবে, নাকি ১৯৩৭ সালের মুসলিম পার্সোনাল ল মেনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, উসকে উঠল সে প্রশ্ন। আর ভোটের বাজারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি যখন জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই সময়ই এই মামলা ফের শরিয়ত আইন বিতর্ককে জাগিয়ে তুলল নতুন করে।
আরও শুনুন:
কর্মরত নারীকে বিয়ে মানেই মারাত্মক ভুল! কী ভাবছেন ভারতীয় পুরুষেরা?
সফিয়া জানাচ্ছেন, একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের ঘোষণাতেই এই সম্পত্তি সংক্রান্ত জট কাটতে পারে। নইলে শরিয়তের নির্দেশ, জন্মসূত্রে মুসলিম হলেই তাকে ওই ধর্মীয় আইনের আওতায় পড়তে হবে। এমনকি যিনি ধর্মাচরণ করছেন না, তাঁরও আইনের হাত থেকে মুক্তি নেই। আর মুসলিম পার্সোনাল ল যে অনেক ক্ষেত্রেই মেয়েদের প্রতি বৈষম্য জারি রাখে, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সফিয়া স্পষ্ট জানাচ্ছেন, মেয়েদের প্রতি এহেন বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই ইসলামের প্রতি আস্থা হারিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও তো পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। কোনও মহিলা তাঁর নিজের সম্পত্তি কাকে দেবেন, তা নির্বাচন করার অধিকার তাঁকে দিতে রাজি নয় শরিয়ত। ওই আইনের নির্দেশমতে, একজন মুসলিম মহিলা তাঁর পরিবারের এক-তৃতীয়াংশ মাত্র সম্পত্তি পেতে পারেন। আর একমাত্র সন্তান হলে সেই ভাগ বেড়ে দাঁড়াবে অর্ধেক, কিন্তু কখনোই পুরোটা নয়। বাকি অংশের উপর মালিকানা বেঁধে দেওয়া আছে পরিবারের কোনও পুরুষ সদস্যের। এ নিয়ম অনুযায়ী, সফিয়ার সম্পত্তির মাত্র অর্ধেক মিলবে তাঁর মেয়ের, আর বাকি অর্ধেকের উপর আপনা থেকেই মালিকানা বর্তাবে সফিয়ার ভাইয়ের। অথচ সফিয়ার বাবাও ইসলামে বিশ্বাস রাখেননি, যেমনটা রাখেন না সফিয়া নিজেও। কিন্তু তারপরেও সফিয়ার ক্ষেত্রে সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার সময় তাঁর বাবার নিজস্ব সিদ্ধান্ত খাটেনি, মানতে হয়েছে শরিয়তকেই। তবে নিজের বেলায় উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্কে না জড়ালেও, মেয়ের বঞ্চনার সম্ভাবনা দেখা মাত্রই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সফিয়া। আর শুধু তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হননি, সরাসরি হেঁটেছেন আইনের পথেই। কারণ মৌখিক বক্তব্য নয়, একমাত্র আইনি ঘোষণার মাধ্যমেই ধর্মনিরপেক্ষ উত্তরাধিকার আইনের শরিক হতে পারবেন তিনি। ধর্মের যে যে বাঁধন মেয়েদের পায়ে জড়িয়ে তাকে আটকাতে চায়, তাদের নিজের জীবন দিয়ে চিনেছেন সফিয়া। আর তাই, মেয়ের সামনে খোলা পথ বিছিয়ে দিতেই দুর্গম পথ হাঁটছেন এক মা।