ভূস্বর্গে ফের ঘনিয়ে উঠছে অশান্তি। জেহাদিদের নিশানায় একের পর এক কাশ্মীরি পণ্ডিত। আতঙ্কিত সকলেই। তবে কি আরও একবার ভিটেমাটি ছেড়ে ছিন্নমূল হওয়ার পালা এল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের? এই পরিস্থিতিতেই এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ্য করে খোলা বার্তা দিলেন ওই সম্প্রদায়ের এক তরুণী, যেখানে ঝরে পড়ল তাঁর উদ্বেগ আর আতঙ্ক। কী বললেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
“ওরা আমাদের মারছে। অথচ গোটা পৃথিবী চুপ! দয়া করে সাহায্য করুন আমাদের। আমাদের, কাশ্মীরের মানুষদের বাঁচান।” সোশ্যাল মিডিয়ায় কাতর আর্তি জানালেন এক কাশ্মীরি তরুণী। তাঁর পরিবার খুন হয়ে যেতে পারে যে কোনও দিন, এই ভয়ানক উদ্বেগ নিয়েই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বারস্থ হলেন তিনি। কেবল কাশ্মীরিই নন, কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ওই তরুণী। আর উপত্যকায় ফের যেভাবে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিশানা করা হচ্ছে, তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন তিনি। বিগত কয়েক দিনে একাধিক কাশ্মীরি পণ্ডিত খুন হয়ে যাওয়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খোলা বার্তা রেখেছেন ওই তরুণী, দীপিকা কল। যত দ্রুত সম্ভব যথাযথ ব্যবস্থা নিন প্রধানমন্ত্রী, ভিডিও বার্তায় সেই আবেদনই জানিয়েছেন দীপিকা।
আরও শুনুন: জঙ্গলের এক কিলোমিটারের মধ্যে নয় কারখানা বা খননের কাজ! বন বাঁচাতে কড়া সুপ্রিম কোর্ট
দীপিকা সাফ জানিয়েছেন, উপত্যকায় ফের যেভাবে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে তিনি মানসিকভাবে অত্যন্ত অস্থির হয়ে পড়েছেন। বস্তুত প্রতিটি হত্যাই কাশ্মীরবাসীকে মনে করিয়ে দিচ্ছে আগেকার গণহত্যার ভয়ংকর স্মৃতি। তাই কার উপরে কখন হামলা শানাবে জেহাদিরা, সেই ভয়ে কাঁপছেন কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা। দীপিকার মতে, ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উপরে যখন নির্বিচারে হত্যালীলা চালানো হয়েছিল, সেই সময় আজকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। তাহলে হয়তো বাইরের পৃথিবীর কাছে নিজেদের দুরবস্থার কথা পৌঁছে দেওয়া সহজ হত তাঁদের পক্ষে। কিন্তু এখন অবস্থা পালটেছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার সুবিধা নিয়েই সারা দুনিয়ার কাছে কাশ্মীরের দুরবস্থার কথা পৌঁছে দিতে চান দীপিকা। উপত্যকার অন্যান্য মানুষদেরও এই বিষয়ে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ওই তরুণী।
আরও শুনুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় হিংসা-বিদ্বেষের পোস্ট বেড়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ, জানাল সমীক্ষা
চলতি বছরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত সামনে এসেছে অন্তত ১৯টি টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা। গত ২২ দিনের মধ্যে ন’টি হত্যার ঘটনায় ত্রস্ত হয়ে উঠেছে উপত্যকা। এর মধ্যে গত দু-সপ্তাহেই খুন হয়েছেন তিন-তিনজন কাশ্মীরি পণ্ডিত। কেন্দ্র তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, এই অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যেই কাশ্মীরি পণ্ডিতরা উপত্যকা ছেড়ে জম্মুতে ফিরতে চাইছেন। কিন্তু পণ্ডিতদের উপত্যকা ত্যাগের দায় নিতে যে কেন্দ্র নারাজ, সে কথা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলাই সার, কিন্তু তাদের দায় নিচ্ছে না মোদি সরকার, এই মর্মে তোপ দেগেছে বিরোধী শিবিরও। আর এই পরিস্থিতিতেই খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছেই রক্ষাকবচের আবেদন জানালেন কাশ্মীরি তরুণী। তিনি বলেছেন, কাশ্মীর থেকে মুছে যেতে বসেছে কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায় এবং তাদের সংস্কৃতি। কোনওদিকে কোনও আশা দেখছেন না তাঁরা। এই অবস্থায় সরকারের থেকে কোনও আন্তরিক উদ্যোগ নেওয়া হবে, এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের। বর্তমানের আধুনিক পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে, যেখানে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির আশীর্বাদ রয়েছে হাতের মুঠোয়, উন্নত হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা- সেখানেও সরকারের তরফে কোনও উদ্যোগ নিতে এত বিলম্ব হচ্ছে কেন, এই প্রশ্ন তুলে কার্যত মোদিকে বিঁধেছেন ওই তরুণী। এই বার্তার জেরে কি কোনও সুরাহা মিলবে আদৌ? তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না শঙ্কিত কাশ্মীরি পণ্ডিতেরা।