লাউডস্পিকার বিতর্কে দিনকয়েক আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল কর্ণাটক। এবার সেই বিষয়টি নিয়েই নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানাল কর্ণাটক হাই কোর্ট। লাউডস্পিকারে আজান কোনওভাবেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের মৌলিক অধিকার বা ভাবাবেগকে আঘাত করতে পারেনা, এমনটাই মত হাইকোর্টের। ঠিক কী বলেছে আদালত? শুনে নিন।
লাউডস্পিকারে আজান বা প্রার্থনা অন্য ধর্মের মৌলিক অধিকারে আঘাত করে না কোনওভাবেই। সাফ জানিয়ে দিল কর্ণাটক হাইকোর্ট। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে তেমনই পর্যবেক্ষণ জানাল আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ।
আরও শুনুন: রুশদির উপর হামলায় নীরবতা কেন? প্রশ্ন খোদ ইসলামিক সংগঠনেরই
দিন কয়েক আগেই লাউডস্পিকার বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। মসজিদ, দরগার মতো মুসলিম ধর্মস্থানগুলি থেকে লাউডস্পিকার সরানোর দাবিতে সরব হয়েছিল বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী দলগুলি। অন্যথায় লাউডস্পিকারে হনুমান চালিশা পাঠেরও হুমকি দেয় তারা। এ নিয়ে অশান্তি ছড়ায় কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র-সহ দেশের বেশ কয়েকটি জায়গায়। তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল কর্ণাটকেও। চাপের মুখে এ নিয়ে নির্দেশিকাও জারি করে ফেলে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, লাউডস্পিকার বা ওই ধরনের কোনও যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে গেলে অন্তত ১৫দিন আগে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে অনুমতি নিতে হবে। পাশাপাশি মসজিদে আজান বা প্রার্থনা করার ব্যাপারেও কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বম্মাই। বিষয়টিকে মোটেও ভালভাবে নেয়নি সে রাজ্যের মুসলিম নাগরিক এবং সংগঠনগুলি। এমনিতেই হিজাব বিতর্ক-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে তেতে ছিল কর্ণাটক। সেই আগুনেই ঘি ঢালে লাউডস্পিকার বিতর্ক। স্বাভাবিক ভাবেই ওই ঘটনার জল গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত।
আরও শুনুন: ‘করবা চৌথ’ নিয়ে মহিলাদের খোঁচা, কল্পনা চাওলার প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসকে তোপ বিজেপির
বিষয়টি নিয়ে কর্ণাটক হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা মঞ্জুনাথ এস হালাওয়ার। সেই মামলার শুনানিতেই সম্প্রতি নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে কর্ণাটক হাই কোর্ট। যেখানে ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহার সংক্রান্ত সরকারি ওই নির্দেশকে কার্যত নাকচ করে দিয়েছে প্রধান বিচারপতি অলোক আরাধের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। লাউডস্পিকারে আজান বা প্রার্থনা অন্য কোনও ধর্মাবলম্বীর মৌলিক অধিকার বা বিশ্বাসে কোনও রকম আঘাত করে না। ফলে মসজিদ, দরগা বা ওই ধরণের কোনও মুসলিম ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার ব্যবহারে আইনত কোনও বাধা নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ২৫ ও ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বাধীন ভারতের যে কোনও নাগরিকের নিজস্ব ধর্ম এবং তার উপাচার বা রীতি পালনের অধিকার রয়েছে। তবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নৈতিকতা এবং স্বাস্থ্য, এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে পরিস্থিতিভেদে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে বলেও জানিয়ে দিয়েছে বেঞ্চ। পাশাপাশি এ ব্যাপারে পরিবেশ দূষণ আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখাও জরুরি বলে মনে করিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট।