জেলার অধিকাংশ যুবকেরই বিয়ের বয়স পেরিয়েছে অনেক আগে। তবু ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ ভাগ্যে জোটেনি কারওরই। জুটবেই বা কী করে, গ্রামে তো বিবাহযোগ্যা মেয়েই নেই! তাই সরাসরি ভগবানের কাছেই বিয়ের আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলার অববিবাহিত যুবকরা। কোথায় ঘটেছে এমন কাণ্ড? আসুন শুনে নিই।
‘দাদা পায়ে পড়ি রে মেলা থেকে বউ এনে দে’- কর্ণাটকের এই ঘটনা যেন মনে করিয়ে দিয়েছে এই প্রচলিত গানটির কথাই। তবে এখানে ‘দাদার’ বদলে বউ এনে দেওয়ার আবদার করা হয়েছে স্বয়ং ভগবানের কাছে! আর এমন অদ্ভুত ‘আবদার’ করেছেন কর্ণাটকের মান্ডিয়া জেলার একদল অবিবাহিত যুবক। তবে শুধু কথার কথা নয়। ইচ্ছাপূরণের স্বার্থে রীতিমতো পরিশ্রমও করেছে এই যুবকের দল। প্রায় ১০৫ কিমি পদযাত্রা করে জনপ্রিয় এক মন্দিরে পুজো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: বইমেলায় নজর কাড়ছে সুলেখার ‘ফিরিঙ্গী কালি’, কেন এমন নামকরণ জানেন?
তবে হঠাৎ এমন বিয়ের আবদার কেন?
নেপথ্যে রয়েছে এই জেলার নারী-পুরুষ অনুপাতে ব্যাপক বৈষম্য। বিগত কয়েক বছরে এই জেলায় মেয়েদের সংখ্যা যথেষ্ট কমেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কন্যাভ্রূণ হত্যাই যার আসল কারণ। তবে এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে জেলার অবিবাহিত যুবকদের। কৃষিপ্রধান এই জেলায় বিবাহযোগ্য পুরুষ থাকলেও, দেখা নেই বিবাহযোগ্যা কন্যাদের। তবে এই সমস্যার কারণ নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই তাঁদের। তাঁরা শুধু সমাধান চান। থুড়ি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চান। তাই নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন অদ্ভুত এক উপায়। যে কোনও বিপদেই যিনি ভরসা জোগান, সেই ঈশ্বরের কাছেই নিজেদের দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে কথায় আছে ‘কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না’। তাই ঘরে বসে বা স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিয়ে নয়। এই জেলার যুবকরা ঠিক করেছেন ১০৫ কিমি দূরে অবস্থিত এক জনপ্রিয় পাহাড়ি মন্দিরে পুজো দিতে যাবেন। এবং এই পুরো যাত্রাটাই তাঁরা সারবেন পায়ে হেঁটে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। নিজেদের অবস্থা মতো তাঁরা এই অভিনব পদযাত্রার নামও দেন ‘ব্রহ্মচারিগালা পদযাত্রা’। একইসঙ্গে আহ্বান জানান আশেপাশের জেলার অবিবাহিত যুবকদেরও।
আরও শুনুন: ধুতির সঙ্গে আর শার্ট নয়, পাঞ্জাবিই পোশাক! আকস্মিক ঘটনায় সিদ্ধান্ত শঙ্খ ঘোষের
আশ্চর্যভাবে মহীশূর, বেঙ্গালুরু সহ কর্ণাটকের অন্যান্য জেলা থেকেও দলে দলে যুবকেরা আসতে থাকেন এই যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য। ঠিক ছিল মান্ডিয়া জেলার অনতিদূরের অবস্থিত এক গ্রাম থেকে আরম্ভ করে টানা তিনদিন পায়ে হেঁটে চামারাজানগর জেলার এক জনপ্রিয় পাহাড়ি মন্দিরে হাজির হবেন তাঁরা। যার জন্য প্রায় ১০৫ কিমি পথ পায়ে হাঁটতে হবে তাঁদের। স্বাভাবিক ভাবেই আয়োজকেরা ভেবেছিলেন এমন কঠিন কৃচ্ছ্রসাধন করতে কেউই খুব একটা রাজি হবে না। কিন্তু ইতিমধ্যেই এই কঠিন পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি যুবক। যা দেখে আয়োজকদের দাবি, যাত্রার দিন এই সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষেই শুরু হওয়ার কথা তাঁদের এই অদ্ভুত যাত্রার। এই পরিস্থিতিতে যে অনেকেই রয়েছেন, এমনটা দেখে ওই যুবকরা বাড়তি আশ্বাসও পাবেন হয়তো। তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জেরে শেষমেশ বর, থুড়ি বউ মিলবে কি না, তা অবশ্য সময়ই বলে দেবে।