ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা আর ডিম্পলের প্রেমটা রূপকথার মতো হলেও তার পরিণতি রূপকথার মতো হয়নি। বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার আগেই এসে পৌঁছেছিল ছেলের কফিনবন্দি শবদেহ। বিয়ে, ঘর বাঁধা, সংসার, সবকিছুই অধরা থেকে গিয়েছিল ভারতীয় সেনার বেপরোয়া অফিসার বিক্রম বাত্রার জীবনে। তাঁর সঙ্গেই কোথাও যেন মিলে যায় জওয়ান অঙ্কেশ ভরদ্বাজের গল্পটাও। শুনে নেওয়া যাক।
যৌবনে পা রেখেছে ছেলে। দু-বছর আগেই পেয়ে গিয়েছে সরকারি চাকরিও। তাও যেমন তেমন চাকরি নয়, দেশের সেনাবাহিনীর জওয়ান সে। এবার তো টুকটুকে বউ আনার পালা। রোজগেরে ছেলেকে ঘিরে এমন স্বপ্নই দেখেছিলেন মা-বাবা বাঞ্ছা রাম ও কাশ্মীরা দেবী। কিন্তু বজ্রপাতের মতোই সব আশা চুরমার করে দিল এক আকস্মিক দুর্ঘটনা। ছেলের সঙ্গে আর দেখা হল না তাঁদের। বদলে বাড়িতে এল জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিন। ২২ বছরের তরুণ জওয়ান অঙ্কেশ ভরদ্বাজের প্রাণ কেড়ে নিল তুষারধস। কিন্তু ছেলে আর না থাকলেও, ছেলেকে নিয়ে দেখা রঙিন স্বপ্নকে মরতে দিলেন না মা-বাবা। শেষযাত্রায় যাওয়ার আগে সাদা কাপড়ে নয়, বরবেশে ছেলেকে সাজিয়ে দিলেন তাঁরা।
আরও শুনুন – ঝুলিতে রয়েছে ২০টি ডিগ্রি, ভারতের সবচেয়ে ‘শিক্ষিত’ ব্যক্তিকে চেনেন?
৬ ফেব্রুয়ারি আচমকাই জোরালো তুষারধস শুরু হয় অরুণাচল প্রদেশের কামেং সেক্টরে। তাতে আটকে পড়ে ভারতীয় সেনার একটি টহলদার দল। উদ্ধারকারী দলও পাঠানো হয় সঙ্গে সঙ্গেই। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাড়ে চোদ্দ হাজার ফুট উচ্চতায় পৌঁছান সেনারা। উদ্ধার হয় পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে আটকে থাকা অঙ্কেশ-সহ আরও সাত জওয়ানের দেহ। বাকিদের মতো অঙ্কেশের দেহও পাঠানো হয় তাঁর বাড়িতে, হিমাচলপ্রদেশের সেউ গ্রামে।
আরও জানুন – কথায় বলে ‘মগের মুলুক’ পেয়েছ! কেন এমন কথা বলা হয় জানেন?
জানা গিয়েছে, মৃত জওয়ানের বাবা অনুরোধ করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে যেন দিনের আলোতে বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সেইমতো আগের রাতে দেহটিকে রেস্ট হাউজে রেখে পর দিন গ্রামে প্রবেশ করা হয়। দেখা যায়, নিজেদের বাড়িটিকে বিয়েবাড়ির মতো করেই সাজিয়ে রেখেছেন অঙ্কেশের মা-বাবা। পাশাপাশি জওয়ানকে যথাযোগ্য সম্মান জানাবার জন্য ছিল জাতীয় পতাকাও। ছেলের মৃতদেহের সামনে স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি দম্পতি। চোখের জলে ভেসেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তাঁরা। তার আগে বরের সাজে সাজিয়ে দিয়েছেন ছেলের মৃতদেহকেই। এমনকি বিয়ের শোভাযাত্রার মতোই একটি ব্যান্ড পার্টিরও আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। সেইভাবেই সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মৃত জওয়ানের দেহ।
এহেন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আবেগে বিহ্বল সকলে। আপাতত বিয়ের এই অভিনয়টুকু দিয়েই নিজেদের সান্ত্বনা দিতে চান পুত্রহারা মা-বাবা।