‘হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে’- বাংলা গানের এই লাইনটাই সম্ভবত নিজের জীবনে অনুসরণ করেছিলেন এই ব্যক্তি। চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া এই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চাকরি তো ফিরে পেয়েছেনই। সঙ্গে বিনা পরিশ্রমেই গত সাত বছরের বেতন পকেটস্থ করার সব ব্যবস্থাই পাকা করে ফেলেছেন তিনি। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই গল্পই।
করোনাকালীন সময়ে বহু সংস্থাই মন দিয়েছিল কর্মী ছাঁটাইয়ে। সে নিয়ে বহু বিতর্কও হয়েছে। তবে শুধু করোনার সময়েই নয়। নির্বিচারে কর্মীছাঁটাইয়ের পরম্পরা আরও আগে থেকেই চলে আসছে বহু সংস্থাতে। আর বলাই বাহুল্য সে ব্যাপারে বিশেষ ভাবে এগিয়ে রয়েছে বহু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই।
তেমন ভাবেই আট বছর আগে সংস্থার কোপে পড়েছিলেন চেন্নাইয়ের এক তথ্যপ্রযুক্তিকর্মী। ২০১৫ সালে চাকরি যায় তিরুমালাই সেলভন নামে ওই ব্যক্তির। তবে এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না তিরুমালাই। বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
আরও শুনুন: কাজ বলতে পর্ন দেখা, বেতন আকাশছোঁয়া, এমনই মজার চাকরি পেলেন তরুণী
আর সেই দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে অবশেষে সুবিচার পেয়েছেন ৪৮ বছরের ওই ব্যক্তি। তাঁর পক্ষেই রায় জানিয়েছে চেন্নাইয়ের একটি লেবার কোর্ট। যার জেরে হারানো চাকরি ফের ফিরে পেতে চলেছেন তিরুমালাই।
ওই তথ্য়প্রযুক্তি সংস্থাটিতে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পদে চাকরি করতেন তিনি। আর ওই পদেই তাঁকে ফের বহাল করতে হবে ওই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটিকে। এমনই নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শুধু তাই নয়, সংস্থাটিকে গত সাত বছরের বেতন ক্ষতিপূরণ হিসেবেও তিরুমালাইকে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। অর্থাৎ বিনা পরিশ্রমেই গত সাত বছরের পারিশ্রমিক হাতে আসতে চলেছে ওই ব্যক্তির।
আরও শুনুন: পঞ্চায়েতের সচিবজির ‘তিন বউ’ লড়ছেন ভোটে, ব্যাপার দেখে চক্ষু চড়কগাছ কর্তৃপক্ষের
না, সহজ ছিল না লড়াইটা তিরুমালাইয়ের জন্য। চাকরি যাওয়ার পর থেকে ফ্রিল্যান্স কনসাল্টেন্ট হিসেবে বহু সফটওয়ার সংস্থায় কাজ করতে বাধ্য হয়েছে তাঁকে। স্বাভাবিক ভাবেই তেমন বেতন মিলত না। সংসার টানতে যোগ দেন রিয়েল এস্টেটের ব্রোকার হিসেবে। তার পাশাপাশি লেগেই ছিল আদালতে দৌড়োদৌড়ি। হিসেব করে দেখলে গত সাত বছরে দেড়শো বারের বেশি আদালতের চক্কর কেটেছেন তিনি। আর সেই পরিশ্রমেরই ফল পেয়েছেন তিনি হাতেনাতে। তবে আইনি লড়াইয়ে তিনি সবসময়ে পাশে পেয়েছিলেন আইটি কর্মীদের ফোরামকে। তিরুমালাইয়ের এই জয়কে সার্বিক ফোরামের জয় বলেই মনে করেছেন সেখানকার কর্তাব্যক্তিরা। ওই যে কথায় বলে, শেষ ভাল যাঁর, সব ভাল তাঁর। আর তেমনটাই ঘটেছে তিরুমালাইয়ের ক্ষেত্রে। তবে ওই তথ্যপ্রযুক্তির সংস্থার জন্য অবশ্য শেষটা মোটেই ভাল হল না।
এমন কত কর্মীছাঁটাইয়ের কথা তো হামেশাই শোনা যায়। তবে তিরুমালাইকে ‘পিঙ্ক স্লিপ’ ধরানোর মাশুল যে এভাবে গুনতে হবে তাদের, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি সেই সংস্থার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।