নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যে তোলপাড় ভারত। বিক্ষোভের আঁচ দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছেছিল বিদেশেও। ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিয়েছিল বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ। সংশয় তৈরি হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়েও। তবে সেই সংশয়ের মধ্যেই আশা জাগিয়ে ভারত থেকে কুয়েতে পাড়ি দিল বিপুল পরিমাণ গোবর। শেষপর্যন্ত কি তবে মিটল দু-দেশের মনোমালিন্য? কী বলছেন বিশেষজ্ঞেরা? শুনে নিন।
নূপুর শর্মা বিতর্ককে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির সম্মিলিত বিক্ষোভের মুখে পড়েছে ভারত। এমনকী আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ভারতীয় পণ্য নিষিদ্ধ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সৌদি আরব, কুয়েত, কাতারের মতো বেশ কয়েকটি দেশ।
এমনিতেই ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা তলানিতে। প্রতিদিন পড়ছে টাকার দাম। এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মনোমালিন্যের মাশুল বেশ চড়া দামেই গুণতে হতে পারে নয়াদিল্লিকে। গোড়াতেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। সেই আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক তা-ও বলা যাচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ কড়া পদক্ষেপের কথা বললেও আশার কথা যে একেবারেই নেই, তা বললেও ভুল হবে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে কুয়েতের সঙ্গে ফের অর্থনৈতিক লেনদেনে জড়াল ভারত। সূত্রের খবর, অতিসম্প্রতি ১৯২ মেট্রিক টন গোবর কুয়েতে রপ্তানি করেছে ভারত।
আরও শুনুন: বিতর্কিত মন্তব্যের পরেও ক্ষমা করা যায় নূপুর শর্মাকে, বার্তা ইসলাম ধর্মাবলম্বী একাংশের
হজরৎ মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে অশান্তির আঁচ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের বিভিন্ন কোণায়। নূপুর শর্মার গ্রেপ্তারি চেয়ে সরব হন সংখ্যালঘুরা। এমনকি খুনের হুমকিও পান নূপুর। বিক্ষোভের ধুয়ো উঠতেই দলের সমস্ত পদ থেকে নূপুর শর্মাকে বহিষ্কার করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তার পরেও ঠেকানো যায়নি প্রতিবাদের ঝড়। বিক্ষোভ ও অশান্তি দমনে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের সরকার। বিক্ষোভকারীদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়ার মতো স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কয়েকটি রাজ্যের প্রশাসন। সেসব নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নষ্টের ব্যাপারটা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছিল ওয়াকিবহাল মহলকে। বিশেষত ভারতের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বিষয়টি দুশ্চিন্তার তো বটেই। ইতিমধ্যেই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে গম রপ্তানিতে আপত্তি প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।
তবে এত সব আশাহীনতার মাঝে ভরসা জাগিয়ে ভারত থেকে কুয়েতের উদ্দেশে রওনা হয়েছে ওই বিপুল পরিমাণ গোবর। সম্ভবত প্রথম বার কুয়েতে রপ্তানি হচ্ছে গোবরের মতো কোনও জিনিস। সানরাইস এগ্রিল্যান্ড নামে জয়পুরের একটি সংস্থার থেকে ওই বিরাট পরিমাণ গোবর কেনার বরাত দেয় কুয়েতের একটি বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা। সম্ভবত অর্গানিক ফার্মিংয়ের জন্যই তা কিনছে কুয়েত। শুল্ক দপ্তরের নজরদারিতে ওই গোবর প্যাক করে পাঠানো হয়েছে কুয়েতে।
আরও শুনুন: মাস্টারশেফের মঞ্চে ভেলপুরির জয়জয়কার, বিশ্বজয় ভারতীয় খাবারের
সম্প্রতি ভারতের প্রাণীজাত জিনিসপত্রের দর বাড়ছে বাইরের দেশগুলির কাছে। ২০২০-২১ সালে এই ধরণের পণ্য রপ্তানি করে প্রায় ২৮ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে ভারত। তাছাড়া দিনে দিনে অর্গানিক চাষবাসের চাহিদাও বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে সেখানে বাড়ছে গোবর সারের চাহিদাও। গবেষণা বলেছে, গোবর সারের ব্যবহারে যে শুধুমাত্র ফসলের উৎপাদন বাড়ে, তাই নয় মানুষের বেশ কিছু গুরুতর রোগের প্রকোপও কমে এর ফলে। শুধু তাই নয়, কুয়েতের একদল কৃষিবিজ্ঞানীর দাবি, গোবর সার ব্যবহারে উৎপাদিত ফলের আকারও বাড়ানো গিয়েছে বেশ কয়েক গুণ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই দিনকে দিন আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে গোবরের চাহিদা। আর সেই গোবর রপ্তানিতেই শীর্ষে রয়েছে ভারত। মালদ্বীপ, আমেরিকা ও মালয়েশিয়াতে এতদিন সবচেয়ে বেশি গোবর রপ্তানি করত ভারত। এবার সেই তালিকায় নাম লেখাল কুয়েতও।
গত সপ্তাহেই নূপুর শর্মা বির্তকে ভারতকে সমন পাঠিয়েছিল কুয়েত। ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দেয় তারা। এমনকী কুয়েতের বেশ কিছু সুপারমার্কেট ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শেষপর্যন্ত সেই বিতর্কের প্রভাব ভারত-কুয়েত বাণিজ্যিক সম্পর্কে পড়েনি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই বিপুল পরিমাণ গোবরের কুয়েতের উদ্দেশে রওনা দেওয়া অন্তত সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।