সাদামাটা শাড়ি, কাদামাখা পা। নিজের কাজে অকুতভয়। অসমের বন্যা বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনে আসা এই আইএএস অফিসারের গল্পই আপাতত ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখে মুখে। কী করেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
“রাজদণ্ড ফেলে দিয়ে অগোচরে যিনি সাধারণ প্রজাদের ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়ান মনে মনে তাকে যদি মান দিতে না পারি তবে সেটাতে আপনাকেই খর্ব করি বাদশাকে নয়।”- নিজের একটি চিঠিতে এমন কথাই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আসল রাজা তো তিনিই, যিনি সিংহাসনে বসে নয়, নিজের রাজত্বকে চেনেন বা বোঝেন হাতের তালুর মতো করেই। আর এ কথা যে একশো শতাংশ খাঁটি তা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই আমলা।
প্রশাসক বা আমলা মানেই যে তাঁর কাজ শুধু ঠান্ডা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ নয়, তা অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিয়েছেন অসমের কাছার জেলার আইএএস অফিসার কীর্তি জাল্লি।
আরও শুনুন: পৃথিবীটা মানুষের মতো পশুপাখিদেরও, অভয়ারণ্যের পাঠশালায় খুদেদের শেখাচ্ছেন সঞ্জীব
বন্যা বিপর্যস্ত অসম। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকাই জলের তলায়। মাথায় ছাদ নেই। সামান্য খাবারদাবারের জন্যও হাহাকার করছে মানুষ। এ সময় পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরিয়েছেন সেখানকার আইএএস অফিসার কীর্তি জাল্লি। পরনে সাদামাটা শাড়ি, কাদামাখা খালি পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন নৌকার উপরে। না, অতবড় পদ সামলেও বিন্দুমাত্র কোনও আড়ম্বর নেই তার মধ্যে। এমনকি দেখে এ-ও বোঝার উপায় নেই, তিনি সরকারি আমলা। আর সেভাবেই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন অসমের বন্যা বিপর্যস্ত মানুষের কাছে। তাঁদের অসুবিধার কথা শোনেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের মতো করে বোঝার চেষ্টা করেন তাঁদের সমস্ত সমস্যা।
কীর্তির সেই এলাকা পরিদর্শনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নিয়েছেন অনীশ শরণ নামে আর এক আইএএস অফিসার। মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় সেই ছবি। যা দেখে প্রশংসায় উপচে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। কেউ বলেছেন, এমনই সরকারি কর্মীদের চান সাধারণ মানুষ। কেউ আবার বলেছেন, আইএএস অফিসার কীর্তি যেন অন্য কোনও গ্রহের মানুষ। ছকভাঙা। নিজের কাজের প্রতি এতটাই নিবেদিত তিনি, যে কোভিডের সময় ছুটি পর্যন্ত নিতে আপত্তি জানিয়েছিলেন কীর্তি। এমনকি নিজের বিয়ের ছুটিও বাতিল করে সেসময় তিনি চলে এসেছিলেন দপ্তরে। আপাতত কীর্তির প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটদুনিয়া। ইতিমধ্যেই টুইটারে অনীশের পোস্টটি পছন্দ করে ফেলেছেন ৪১ হাজার মানুষ।
আরও শুনুন: ৭৫ বছর পরেও টাটকা ভিটেমাটির স্মৃতি, ভিসা পেয়ে পাক মুলুকে যাচ্ছেন পুনের বৃদ্ধা
দিন কয়েক আগেই সামনে এসেছে সঞ্জীব খিরওয়ার ও তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু দুগ্গার কথা। তাঁরা দুজনেই আইএএস অফিসার। একটি সরকারি স্টেডিয়াম বন্ধ করে পোষ্য কুকুরকে হাঁটানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ব্যাপারটি নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠেছে নিন্দার ঝড়। খরব ছড়াতেই ওই দুই আইএএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। বদল করা হয়েছে দুজনকেই। চারদিকে এসব আশাহীনতা, দুর্নীতির গল্পের মধ্যেই আশা জোগান কীর্তির মতো অফিসারেরা। যাঁরা সমস্ত রকম ঝুঁকি সামলেও ঝাঁপিয়ে পড়েন মানুষের কাজে। পালন করেন নিজেদের দায়িত্ব। সঠিক প্রশাসক তো তিনিই, যিনি আমআদমির পাশে বসে তাঁদের সমস্যাগুলোকে তাঁদের মতো করে বোঝার চেষ্টা করেন। ঠিক যেমনটা করেছেন কাছাড়ের এই প্রশাসক।