২০২১ এর টোকিও অলিম্পিকে রুপো জিতলেন মণিপুরের মেয়ে মীরাবাই চানু। এর আগে ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছিলেন এম সি মেরি কম। তিনিও মণিপুরের মেয়ে। এক-একটি পদক জয়ের পর উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভেসে যায় গোটা দেশ। কিন্তু অন্যান্য সময়? এইসব উজ্জ্বল নামের বাইরে মণিপুর তথা উত্তর-পূর্বের ভারতকে ঠিক কী চোখে দেখে বাকি ভারতবর্ষ?
‘চক দে ইন্ডিয়া’ সিনেমাটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা মনে করতে পারবেন ভারতের জাতীয় মহিলা হকি দলে খেলতে আসা দুই মণিপুরী মেয়েকে। ‘তোমরা তো আমাদের অতিথি’, বলে কর্মচারী ভদ্রলোক তাদের সাদরে আপ্যায়ন জানিয়েছিলেন। এমনকী এ কথায় তারা খুশি হয়নি বলে খুবই বিস্মিতও হয়ে পড়েছিলেন। এইরকম মনোভাব নিয়েই সম্প্রতি একটি টুইটে প্রতিক্রিয়া জানালেন অভিনেতা মিলিন্দ সোমান-এর স্ত্রী অঙ্কিতা কনওয়ার। তাঁর মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতের অধিবাসীরা দেশের জন্য পদক জিতে আনলে তবেই ভারতীয় নাগরিকের মর্যাদা পান। না হলে তাঁদের উপাধি হিসেবে জোটে বিভিন্ন অপশব্দ। সে তালিকায় নয়া সংযোজন ‘করোনা’। অঙ্কিতা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথা বলতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি।
আরও শুনুন: Stereotype ভাঙছে মেয়েরা, সমাজের ভাবনায় কি আসবে পরিবর্তন?
একা অঙ্কিতা নন। নেপাল, সিকিম, মণিপুর, মিজোরাম ইত্যাদি অঞ্চল থেকে পড়াশোনার জন্য বা চাকরিসূত্রে যাঁরাই পা রাখেন বৃহত্তর ভারতে, তাঁদের অধিকাংশের অভিজ্ঞতা একই ধরনের। এমনকী, আমাদের এত গর্বের শহর কলকাতা নিজেকে যতই উদার বলে প্রচার করুক না কেন, তার গায়েও লেগে আছে এই লজ্জার ছাপ। বাংলা ব্যান্ড ‘চন্দ্রবিন্দু’ সেই যে এককালে গেয়েছিল, “আমরা পাঞ্জাবিদের পাঁইয়া বলি, মাড়োয়ারি মাওড়া/ আর নন-কমিউনাল দেওয়াল লিখি ক্যালকাটা টু হাওড়া”- সে কথাকে দিব্যি জিইয়ে রেখেছে বাঙালি। অন্যকে নিয়ে মশকরার নিরাপদ উল্লাস বাঙালি যেন তারিয়ে তারিয়ে উপভোগই করে । প্রতি বছর ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল থেকে এ শহরের কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখেন একগুচ্ছ তরুণ-তরুণী। কেউ নেপালি, কেউ চাকমা, কেউ সিকিমিজ, কেউ মণিপুরী, কিন্তু এ শহর তাঁদের একটাই জাতিপরিচয়ের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলে। কেউ ভাবে ‘নেপালি’, কেউ ‘চিনে’। আমাদের দুর্দান্ত সচেতন গুগল-পটু শহর জানে, নাক খ্যাঁদা ও চোখ ছোট মানেই চিনে। উঁহুঁ, চিনে মনে করলেও চিনে বলে ডাকে না কিন্তু। ডাকার জন্য বরাদ্দ রয়েছে চিনের অপভ্রংশে আসা একটি কুৎসিত শব্দ। নামজাদা কলেজ হোস্টেল হোক কি রাস্তাঘাট-বাজার-সিনেমা হল-বাসের ভিড়, সর্বত্র উড়ে আসে সেই একই টিটকিরি। বাড়িভাড়া চাইলে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে। বেশি ভাড়ার চক্করে যদি বা ঘর জুটল তো রাশি রাশি শর্ত। কী খাওয়া যাবে না, কী পরা যাবে না, কী করা যাবে না- সবকিছুরই লম্বা তালিকা ঝুলিয়ে দেয় নাকের ডগায়। প্রায়শই সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে এরকম ঘটনা।
বাকি অংশ শুনে নিন প্লে-বাটনে ক্লিক করে।