ধর্ষণের জেরে যে সন্তানের জন্ম, সেই ছেলেই রুখে দাঁড়ালেন নির্যাতিতা মায়ের হয়ে। ২৭ বছর পেরিয়ে মাকে ন্যায়বিচার এনে দিলেন তিনিই। দেশজুড়ে মেয়েদের অসংখ্য নির্যাতনের কাহিনির যে ধারা, সেখানে আশা-ভরসার আলো জোগায় এ গল্প। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ধর্ষণ কাণ্ডের প্রেক্ষিতে বারবার উঠছে দ্রুত বিচারের দাবি। দাবি উঠছে, যেন ন্যায়বিচারের আশায় অনন্তকাল ধরে অপেক্ষা করে থাকতে না হয় নির্যাতিতা কিংবা তাঁর পরিবারকে। সত্যি বলতে, দেশজুড়ে নারীর প্রতি নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটছেই। তবে তার বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতেই থেকে যায় প্রায়। নির্যাতিতা যদি বা অত্যাচার সয়ে বেঁচে যান, তবুও এই নৃশংসতার অভিঘাত পেরিয়ে তাঁর মুখ খোলা সহজ হয় না। লোকলজ্জার ভয় তো থাকেই। অনেকসময়ই পুলিশের কাছ থেকেও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। আর সবকিছুর উপরে থাকে আইনের দীর্ঘসূত্রিতা। সব মিলিয়ে ধর্ষণের হার যত বাড়ছে, শাস্তির হার সেই অনুপাতে বাড়েনি, বলছে সমীক্ষাই। আর সেই হতাশার মধ্যেই যেন আশার আলো দেখায় এই ঘটনা। যেখানে ধর্ষিতা মাকে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করার সাহস জুগিয়েছেন তাঁর ছেলে। যে ছেলের জন্ম হয়েছিল ওই ধর্ষণের দরুন। যেখানে লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকেই নির্যাতিতাকে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়, সেখানে এই ছেলেই মাকে মুখ খুলতে বলেছেন। মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অবশেষে ছিনিয়ে এনেছেন ন্যায়বিচারও। দীর্ঘ ২৭ বছর পর, নিজের জন্যে রুখে দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছেন নির্যাতিতা।
আরও শুনুন:
ধর্ষিতাদের মুখ লুকোনোর দায় নেই, দেশজোড়া ‘গরিমা যাত্রা’য় হেঁটে বুঝিয়েছিলেন নির্যাতিতারা
এ ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৪ সালে। উত্তরপ্রদেশের সাজাহানপুরে দিদি জামাইবাবুর সঙ্গে থাকতেন ওই নারী। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৩ বছর। ওই এলাকারই বাসিন্দা নাকি হাসান এবং তার ভাই গুড্ডু হাসান ফাঁকা বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ করে কিশোরীকে। নির্যাতিতার দাবি, একবার নয়, একাধিকবার তাঁকে নির্যাতন করেছিল তারা। কিন্তু সেসময় প্রতিবাদ করতে পারেননি তিনি। এদিকে ধর্ষণের জেরে সেই কিশোরী বয়সেই তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এক ছেলের জন্মও দেন। তবে সেই ছেলেকে এক আত্মীয়ের কাছে দত্তক দিয়ে মেয়েটির বিয়ে দেয় পরিবার। তবে এ ঘটনা চাপা থাকেনি। জানাজানি হওয়ার পর নির্যাতিতাকে ছেড়ে যান তাঁর স্বামী। না পরিবার, না স্বামী, কেউই তাঁর উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হননি। কিন্তু সেই কাজটিই করেছেন তাঁর সন্তান। সব কথা জানার পর তিনিই মাকে সাহস জোগান ওই ধর্ষকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে। ২৭ বছর পর, ২০২১ সালে ওই দুই ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেন তাঁরা। নির্যাতিতা ও তাঁর সন্তানের সঙ্গে ওই পুরুষদের ডিএনএ টেস্টের দাবি তোলেন। আর সেই টেস্টেই প্রমাণিত হয়ে যায় সব অভিযোগ। ২০২২ সালে ওই দুই ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১০ বছরের কারাদণ্ড শোনানো হয় তাদের।
আরও শুনুন:
ধর্ষণ-প্রতিরোধী আইনে জোর! নির্ভয়া কাণ্ডেও বদলায় আইন, সমাজের মন বদলেছে কি?
মেয়েদের প্রতি ঘটে চলা অজস্র যৌন নির্যাতনের ঘটনা আমাদের বিচলিত করে। একেকটি ঘটনা নৃশংসতার বিচারে যেন আগের সব ইতিহাসও ছাপিয়ে যায়। তারপরেও বিচারের দাবিতে অপেক্ষা থামে না। নির্যাতিতাকে দেখার চোখও বদলাতে চায় না। সমাজের তরফে অভিযোগের আঙুল উঠে আসে নির্যাতিতার দিকে। সেইসব অপমানের প্রেক্ষিতে এই মা ও সন্তানের কাহিনি যেন আশা-ভরসার আলো জোগায়। বুঝিয়ে দেয়, সমস্ত অন্ধকারের মধ্যেও আলো সত্যিই থেকে যায় কোথাও কোথাও।