মহাকুম্ভ। মানবতার মিলনমেলা। ভারতের অধ্যাত্মসাধনার অন্যতম ক্ষেত্র। সেখানে এত রিল কেন? এই নিয়েই এবার অসন্তোষ প্রকাশ করলেন হিন্দু ধর্মগুরু পণ্ডিত ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ শাস্ত্রী।
মহাকুম্ভের ঐতিহ্য চিরকালীন। তবে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সেখানে যেন লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। ডিজি যুগের প্রভাব এড়াতে পারেনি মহাকুম্ভ। আর তাই কুম্ভ যেমন প্রয়াগরাজে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বহু রিল। চোখের নিমেষে ভাইরাল। কুম্ভের চর্চাও তাই ঘুরে গিয়েছ নানা দিকে। কখনও সুন্দরী সাধ্বীর কুম্ভ মাতানো নিয়ে চলেছে দেদার কথাবার্তা। কখনও আবার আইআইটি বাবার ধর্মপথে জীবনের মোক্ষসন্ধান নিয়ে মশগুল মানুষ। মালা-বিক্রেতা এক তরুণীকে নিয়েও কম চর্চা হয়নি। শোনা যাচ্ছে, সেখান থেকে সোজা অল্লু অর্জুনের সিনেমায় সুযোগ পেয়েছেন তিনি। আবার এক আরসিবি ফ্যান প্রিয় দলের জার্সিকে স্নান করিয়েছেন কুম্ভে। অমৃতকুম্ভের সন্ধান যেন ধর্মচর্চা থেকে বাঁক নিয়েছে একেবারে অন্যদিকে। তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। শোনা যাচ্ছে, নেটদুনিয়ার এই হাতছানি কাটাতে সংশ্লিষ্ট আখড়াগুলো পদক্ষেপও করেছে। তবে, এবার সরাসরিই এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন ধর্মগুরু ধীরেন্দ্রকৃষ্ণ শাস্ত্রী।
:আরও শুনুন:
কুম্ভমেলায় চাহিদা তুঙ্গে গীতা, রামচরিত ইংরাজি অনুবাদের! ধর্মের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে জেন-জির?
তার বক্তব্য, এতবড় একটা ধর্মচর্চার পরিসর কেবল রিলের বন্যায় ভেসে যেতে পারে না। কুম্ভে সনাতন ধর্মের নানা ভাবনা নিয়ে আলোচনা হবে। আর সেই সূত্রেই প্রকাশিত হবে নতুন নতুন পথ। কুম্ভে জীবনের যে সার্থকতার সন্ধান হয়েছে যুগে যুগে তা এই সমৃদ্ধ আলোচনার সূত্রেই। সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সরে এসছে কুম্ভ, এটাই তাঁর আক্ষেপের জায়গা। তাঁর বক্তব্য, কুম্ভ তো ‘রিয়েল’, ‘রিল’ নয়। কেউ বা কারা ভাইরাল হবে বলে কুম্ভের এই মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয় না। নাম না করলেও, সাম্প্রতিক কুম্ভে যাঁরা ভাইরাল হয়েছেন তাঁদেরই যেন একহাত নিয়েছেন এই ধর্মগুরু।
:আরও শুনুন:
পরিবার ছেড়ে সন্ন্যাসী, মৃত্যুর পর কীভাবে সৎকার হয় নাগা সাধুর দেহ?
তবে তিনি একা শুধু নন; এবারের কুম্ভে বারেবারেই এই আলোচনা চলেছে। কুম্ভের মতো জনসমাবেশকে নানা সংস্থা প্রচারমূলক নানা কাজে ব্যবহার করে থাকে। তার ভালো দিকও আছে। কুম্ভে বিনামূল্যে মহিলাদের স্তন-ক্যানসার পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। কুম্ভের মতো ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক পরিসর যে পুরুষতন্ত্রের মেল গেজকে অনেকটা দূর করতে পেরেছে, তাও আলোচনার বিষয় হয়েছে বইকি! তবে সেই গভীরতা পেরিয়ে কুম্ভ যেন অনেকটা চটক-চমক ভাইরাল প্রবণতার দিকেও বেঁকে গিয়েছে। নেটদুনিয়ার যে প্রভাব সামগ্রিক সময়ে, তা খানিকটা হলেও কবজা করেছে কুম্ভকে। এর থেকে মুক্তি কোন পথে? কুম্ভ নিজের স্বার্থেই আগামী দিনে সে পথ খুঁজে পাবে বলেই আশা করা যায়।